দেশের অন্য ক্ষেত্রের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও চলছে সংস্কার কার্যক্রম। এরই অংশ হিসেবে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন। সাংবাদিকরা ক্রীড়াঙ্গনে অনিয়ম, অসঙ্গতি তুলে ধরার পাশাাপশি উন্নতির জন্য নানা মতামত ব্যক্ত করেছেন। ক্রীড়া উপদেষ্টা শ্রম মন্ত্রণালয়ের একটি জরুরি সভা থাকায় নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টাখানেক পরই আলোচনা শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন মিডিয়ার ক্রীড়া বিভাগের প্রধান, যুগ্ম ক্রীড়া সম্পাদক দেশের শীর্ষ ক্রীড়া সাংবাদিকরা উপদেষ্টার মতবিনিময় সভায় এসেছিলেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেছেন। সময় স্বল্পতায় অনেকে বক্তব্য রাখতে না পারলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে মেইলের মাধ্যমেও মতামত প্রদানের অনুরোধ করেছেন উপদেষ্টা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ফেডারেশন ও সকল ক্রীড়া সংস্থার অভিভাবক। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নিজের সেই স্বকীয়তা হারিয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ক্রীড়ার সংস্থা হলেও এখানে ক্রীড়া শাখাই সবচেয়ে অবহেলিত। অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারেই যেন ক্রীড়া পরিষদের পূর্ণ মনোযোগ। অবকাঠামো খাতে টেন্ডার প্রক্রিয়া ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারি দলের প্রভাব ছাড়াও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারী যুক্ত থাকার অভিযোগ বেশ পুরনো। ফেডারেশনের সংস্কারের পাশাপাশি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনিয়ম তদন্তের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। দেশের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া ফেডারেশন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধিভুক্ত হয়েও এই বোর্ডের উপর তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আর্থিক লেনদেনেও অসঙ্গতি রয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অভিভাবক সংস্থা হয়ে ক্রিকেট বোর্ডের অডিটের বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের অবদান অনেক। এর পেছনে মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কোনো ভূমিকাই নেই। জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ের মহিলা ক্রীড়া সংস্থা একেবারে নিষ্ক্রিয়। প্রতি বছর মহিলা ক্রীড়া সংস্থার পেছনে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হয়। এর বিপরীতে ক্রীড়াঙ্গনে কোনো প্রাপ্তি নেই।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আয়ের অন্যতম উৎস স্টেডিয়ামে দোকান। সেই দোকান থেকে ইজারাদার অনেক অর্থ পেলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পায় খুবই সামান্য। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ভাড়া দেয়া দোকানের প্রকৃত মালিকের নাম ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রকাশের দাবি উঠেছে আলোচনা সভায়। পাশাপাশি স্টেডিয়ামে দোকান খাত থেকে রাজস্ব না পাওয়ার বিষয়টিও উঠেছে।
দেশে বর্তমানে ফেডারেশন-এসোসিয়েশন মিলিয়ে সংখ্যা ৫৫। ফুটবল, ক্রিকেটের বাইরে অন্য ফেডারেশনে গত এক মাসে খেলাধূলা একেবারেই নেই। ফেডারেশনগুলো সচল করে আগে খেলাধূলার পরিবেশ শুরুর আহ্বান জানানো হয়েছে। এই আলোচনায় উঠে এসেছে ক্রীড়াঙ্গনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। ক্রীড়াঙ্গনে এদের অনেক অবদান থাকলেও বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। তাদের জন্য আলাদা পরিকল্পনা থাকলে ক্রীড়াঙ্গনে অনেক সাফল্য সম্ভব।
সাংবাদিকদের মতামত, পর্যবেক্ষণ ও অভিযোগ শুনে সবার শেষে বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া। তিনি সমাপনী বক্তব্য বলেন, আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য আমরা পর্যালোচনা করব। ক্রীড়াঙ্গনে আপনারা দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছেন। আপনাদের পর্যবেক্ষণকে আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি। এজন্য সার্চ কমিটিতে দুই জন এবং জেলা পর্যায়েও ক্রীড়া সাংবাদিক প্রতিনিধি রেখেছি। সার্চ কমিটি ফেডারেশনগুলো পর্যালোচনা করে আমাদের প্রতিবেদন দেবে। আমরা এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় উপজেলা-জেলা-বিভাগের কমিটিতে সাংবাদিকদের সদস্য হিসেবে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে। মতবিনিময়ে দুই জন সাংবাদিক অবশ্য ক্রীড়া সাংবাদিকদের শুধু ক্রীড়া সাংবাদিকতাতেই রাখার পরামর্শ দিয়েছেন কমিটিতে না রেখে। তাদের যুক্তি এতে স্বার্থের সংঘাত তৈরি হয়। ক্রীড়া উপদেষ্টা সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা ইতোপূর্বে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন। আশা করি সামনেও করবেন। শুধু খেলোয়াড় কি করলেন, কি খেলেন এর বাইরেও খেলার অনিয়ম-অসঙ্গতি অনুসন্ধান প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে আনবেন। আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার দিকটিও পরোক্ষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। তার বক্তব্যে বলেন, দর্শক হিসেবে আগে দেখেছি থাম্বলাইন ও শিরোনাম এক রকম আর কন্টেন্ট অন্যরকম। অনেক প্রতিবেদন দেখেছি অনুমাননির্ভর। যা খেলার আগে খেলোয়াড়দের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে।
আসিফ মাহমুদ ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও রয়েছেন। সাংবাদিকদের অনেকেই সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামোর আওতায় নেই। ক্রীড়া সাংবাদিকদের মত বিনিময় সভায় এই দিকটিও তুলে এনেছেন তিনি।
ক্রীড়া উপদেষ্টা, মন্ত্রী ক্রীড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে উন্মুক্ত মতবিনিময় সভা বিগত এক দশকে তেমন হয়নি। তাই অনেক সাংবাদিকদের মতামত দেয়ার আগ্রহ ছিল। সময় স্বল্পতায় হয়নি। উপদেষ্টা মন্তব্য শেষ করার পর দুই জন সাংবাদিক বঙ্গবন্ধু ও কমলাপুর স্টেডিয়ামের পরিবেশের বিষয়টি উথাপন করেন। ক্রীড়া উন্নয়নের আগে ক্রীড়া পরিবেশ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান। এর প্রেক্ষিতে উপদেষ্টা বলেন, আমি বাইরের কোনো মানুষ নই। এই সমাজেরই একজন। স্টেডিয়াম এলাকায় এর আগেও গিয়েছি। এখনও আসছি। আমি খবর না দিয়ে আকস্মিক পরিদর্শন পছন্দ করি। এতে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়।