প্রকাশ: শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৪, ১১:৫৫ এএম (ভিজিটর : ২৪৬)
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় বোয়াল, রুই, কাতলা, কার্প, রিঠাসহ বিভিন্ন দেশি মাছের পোনা শিকার করে বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি চলছে। এসব পোনার বেশির ভাগই ধরা হচ্ছে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি দিয়ে। পোনা মাছ ধরা নিষেধ থাকলেও এক শ্রেণির মানুষ তা মানছে না।
ধনবাড়ীসহ সারা দেশে চায়না দুয়ারির ব্যবহার শুরু হয় বছর পাঁচেক আগে। শুরুতে এই জাল চীন থেকে আমদানি করার কারণে এর নাম দেওয়া হয় চায়না দুয়ারি। তবে এখন এ ধরনের জাল দেশেই তৈরি হচ্ছে। সূক্ষ¥ জালে গোলাকৃতি বা চারকোনার রড পরিয়ে খোপ খোপ করে বিশেষ ধরনের ফাঁদ তৈরির মাধ্যমে এটি তৈরি করা হয়। এই ফাঁদ উচ্চতায় দেড় থেকে ২ ফুট এবং লম্বায় ৬০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। অল্প বা গভীর, যেকোনো পানিতে এই ফাঁদ পেতে রাখলে তাতে বড় মাছ, মাছের পোনা, এমনকি ডিম পর্যন্ত ধরা পড়ে। দ্রুত এই জাল মাছ শিকারিদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়। তবে মাছের জন্য মারাত্মক হুমকি হওয়ায় মৎস্য অধিদপ্তর এই জাল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ধনবাড়ী বাজার ছাড়াও উপজেলার বীরতারা’র কেন্দুয়া, রাজার হাট, ধোপাখালী ও ভাইঘাটসহ উপজেলাজুড়ে অর্ধশতাধিক জালের দোকান রয়েছে। আর এসব দোকানের প্রতিটিতেই সবচেয়ে বেশি যে জাল বিক্রি হচ্ছে তা হলো চায়না দুয়ারি।
নিষিদ্ধ হলেও ধনবাড়ী উপজেলার প্রতিটি জালের দোকানেই এই জাল বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হয়। ফলে এগুলো বিক্রি হয় কিছুটা রাখঢাক করে। অবৈধ জাল ব্যবসায়ীরা ঢাকা থেকে কুরিয়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার মাধ্যমে এই জাল ধনবাড়ী এনে বিক্রি করছেন। নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালে যেমন নিধন হচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছের পোনা। এতে একদিকে ধ্বংস হচ্ছে মৎস্যসম্পদ ও জলজপ্রাণী, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়েছে মৎস্য উৎপাদন ও জীববৈচিত্র্য। এসব বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধনবাড়ী বাজারের চার-পাঁচজন জাল ব্যবসায়ী বলেন, শুধু ধনবাড়ী বাজারেই ৬টির মতো জালের দোকান রয়েছে। এসব দোকানে একসময় কারেন্ট জাল বিক্রি হতো। এখন চায়না দুয়ারি বিক্রি হচ্ছে বেশি। ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের সঙ্গে দামদর ঠিক করার পর আড়ালে থাকা জায়গা থেকে নিষিদ্ধ এই জাল এনে বিক্রি করে থাকেন।
বীরকদমতলী ডাকঘরের ই. ডি. ডি.এ হাবিবুর রহমান বলেন, ধনবাড়ী উপজেলা দেশি মাছের জন্য একসময় প্রসিদ্ধ ছিল। অথচ চায়না দুয়ারির জন্য দেশি মাছ প্রায় হারিয়েই গেছে। বাজারে পোনা মাছ এনে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। এই জাল দিয়ে পোনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আকারের মাছ ধরায় উপজেলার নদী ও অন্য প্রাকৃতিক জলাশয় মাছশূন্য হয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে ধনবাড়ী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাহমিনা আখতার তামান্না বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে এ উপজেলায় মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৩৯ মেট্রিকটন। প্রতিবছর এ উপজেলা থেকে প্রায় ৫ হাজার ৩৯ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে শুধু উন্মুক্ত জলাশয় থেকে বর্ষাকালসহ বছরে মাছ আহরণ করা হয় ৪শ ৫০ মেট্রিকটন। চলতি অর্থবছরের শুরুতেই স্থানীয় বিল জলাশয়ে ৩টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এতে ১৫টি চায়না দুয়ারি কারেন্ট জাল জব্দ করে পোড়ানো হয়েছে। এরমূল্য ৬০ হাজার টাকা। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।