বাংলাদেশ উশু ফেডারেশনের বিদ্যমান নানাবিদ দূর্নীতি, স্বৈরাচারীর প্রতিবাদে ৭ দফা দাবী সাংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ উশু ফাউন্ডার ফোরামের নেতবৃন্দ।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি সভাকক্ষে উক্ত ফোরামের মহাসচিব শিফু দিলদার হাসান দিলু, চেয়ারম্যান এড. শহিদুল হক ভুঁইয়া সহ সাবেক খেলোয়াড়, সাবেক ও বর্তমান কমিটির সদস্যবৃন্দ উশু ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি আব্দুস সোবহান গোলাপ (এমপি) ও সাধারন সম্পাদক মো. দুলাল হোসেনের সীমাহীন আওয়ামী সন্ত্রাসী, দুর্নীতি এবং স্বৈরাচারির নানা প্রমানাদি উপস্থিত সাংবাদিকদেও মাঝে তুলে ধরেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া উপকমিটির সদস্য দুলাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ উশু ফেডারেশনের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করা এবং ফেডারেশনের বিগত সকল আর্থিক হিসেবের অডিটসহ সাত-দফা দাবী পেশ করেছেন উশুর প্রতিষ্ঠাতারা।
এড. শহীদুল হক ভূঁইয়া বলেন, উশুতে বর্তমান স্বৈরাচারী কমিটির বিলুপ্তির দাবি করছি। বাংলাদেশে এই খেলার প্রতিষ্ঠাতারা অনেক পরিশ্রম করে এ জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনটি গড়ে তুলেছেন এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্জন এনে দিয়েছেন। কিন্তু তারপর ক্রীড়ার বিভিন্ন ফেডারেশনের মতো এ ফেডারেশনটিকেও রাজনৈতিক ভাবে দখল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় শেষ স্বর্ণপদক জয়ের পর এ ডিসিপ্লিন আর কোনো স্বর্ণ আনতে পারে নাই। এতবছর ধরে কোন নতুন অর্জন হয় নি। জাতীয় নির্বাচনের আগে দুলাল হোসেনের নেতৃত্বে উশুর এডহক কমিটি তড়িঘড়ি করে নির্বাচন করে একটি কমিটি গঠন করেছে। তাই আমাদের দাবী হল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ ও আওয়ামী লীগের ক্রীড়া উপকমিটির সদস্য দুলাল হোসেনের যোগসাজশে গঠিত এ অগণতান্ত্রিক কমিটি বিলুপ্ত করতে হবে।
উশুর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শিফু দিলদার হাসান বলেন, তারা নিজেদের অযোগ্যতার দরুন স্পন্সর আনতে পারে নাই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বরাদ্দর টাকা নিয়েছে কিন্তু তারপরেও ক্রীড়ার উন্নয়ন বা আয়োজনে সেগুলো কাজে লাগায় নাই। তারা আন্তর্জাতিক কোন গেইমসে অংশ নেয় নাই। শুধু একটা আমন্ত্রণমূলক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলো। এছাড়া বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা বাবদ ২১ লাখ টাকা খরচ করেছে। এভাবেই তারা খেলাটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
এই উশু সংগঠক জানান, ইতোপূর্বে ২০০৮ সালে ঢাকায় আয়োজিত ৩য় সাউথ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ তিনটি স্বর্ণপদক, সাতটি রৌপ্যপদক ও ১১টি তাম্র পদক জয় করেছে। এছাড়া ২০১০ এসএ গেমসে দুইটি স্বর্ণপদক ও ২টি তাম্র পদক লাভ করেছে। সেই সাথে বিকেএসপি, সেনাবাহিনী, বর্ডারগার্ড ও বিভিন্ন সংস্থায় খেলাটি যুক্ত করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায়ও নেতৃত্ব দিয়েছে সংগঠকরা। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে প্রভাব খাটিয়ে দখল করার পর থেকেই ফেডারেশন তার জৌলুশ ও পথ হারিয়ে ফেলে।
অভিযোগ রয়েছে ২০১০ এসএ গেমসে স্বর্ণপদকজয়ী খেলোয়াড় মেজবাহ উদ্দিনকে গত ১০ বছর ধরে ফেডারেশনে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে সদস্য মনোনীত করা হলেও তাকে সহযোগিতা করা হয়নি।
বক্তারা অভিযোগ করেন, উশুর সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেনের নিজে উশুর লোক নন। তবু তিনি সেনাবাহিনী ও আনসারের কোচ হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন।
শিফু দিলদার হাসান বলেন, ফেডারেশনের যিনি কোচ তিনি খেলাটাও বুঝেন না। তিনি এই ডিসিপ্লিনে খেলেন নাই। তার একটা সার্টিফিকেট আছে বলে দাবি করেন। কিন্তু জানা গেছে সেই সার্টিফিকেটটাও জাল। এছাড়া সাইক্লিংয়ের একজন কোচকে এনে উশুর ট্রেজারার বানানো হয়েছে যিনি ইতোপূর্বে বিজেএমসির সাইক্লিং কোচ ছিলেন। এভাবে ফেডারেশনে যুক্ত করা হয়েছে উশুর বাইরের লোকদের।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত উশুর আন্তর্জাতিক কোচ ও সিলেট উশুর সংগঠক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান তার সাথে আর্থিক প্রতারণা করেছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন। তিনি জানান যে আন্তর্জাতিক কোচেজ ও রেফারিজ প্রশিক্ষণে ম্যাকাও যাওয়া ও খরচ বাবদ তার পাওনা ৩০০ ডলার বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন যে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
এছাড়া উশু ক্লাব সংগঠন মোহাম্মদ রেজাউল করিম সাদি বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন যে ২০১৮ তে ক্লাব রেজিষ্ট্রেশনের জন্য অর্থও নিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। বাধ্য করেছেন উশুর ড্রেস কিনতেও। কিন্তু আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে তাদের আর অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অভিযোগ এনেছেন খেলা আয়োজন করতে বাঁধা দেবারও। এর আগে, উশু ফেডারেশনের সহসভাপতি আলমগীর শাহও দাবি করেছিলেন, ২০১০ এর পর ২০২৪ পর্যন্ত উশুতে উল্লেখযোগ্য অর্জন নাই। ২০১৭ তে একটা ইভেন্টে অংশ নিয়েও স্বর্ণ আনতে পারে নাই।
সেসময় ফেডারেশনের সহসভাপতি আরও দাবি করেছিলেন যে তার সাক্ষর জাল করে সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন সময়ে সময়ে বিভিন্ন সার্টিফিকেট ইস্যু করেছেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে উশুর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শিফু দিলদার হাসান বলেন, আজ তো আমাদের দাবিগুলো জানালাম। শীঘ্রই ক্রীড়ার সার্চ কমিটি কে আমরা সবকিছু বিস্তারিত জানাবো। এরপরও কাজ না হলে স্বচ্ছতা ফেরাতে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।
ফোরামের চেয়ারম্যান এড. শহিদুল হক ভুঁইয়া জানান, উশু ফেডারেশনের আওয়ামীপন্থী স্বৈরাচারের দোসররা গত ১৪ বছর ফেডারেশনের অর্থ নানা কৌশলে আত্মসাত করেছে। বর্তমান তত্বাবধায়ক সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে দোসীদের বিচার চেয়ে ৭ দফা দাবী তুলে ধরেন তিনি।