বরগুনায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রোগ্রামে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এই নিয়ে বেশ করেকবার বরগুনায় সমন্বয়কদের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে জামেলা চলছে। পুলিশ ও নৌ বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি শান্ত করেন।
আজ (১৪ সেপ্টেম্বর শনিবার) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বৃহত্তর বরিশাল জোনের বিভাগীয় ছাত্র জনতা মৈত্রী সফরের অংশ হিসেবে বরগুনার শিল্পকলা একাডেমীতে উপজেলা প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। মতবিনিময় সভার এক পর্যায়ে বরগুনায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দাবি করা মীর নিলয়কে ছাত্রলীগের দোসর আখ্যায়িত করে রেজাউল করিমের গ্রুপের ছাত্ররা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এতে স্থগিত হয়ে যায় মতবিনিময় সভা।
পরে পুলিশ ও নৌ-বাহিনীর সদস্যরা প্রায় আধাঘন্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি শান্ত করেন। গত বৃহস্পতিবার মীর নিলয়ের নেতৃত্বে অন্য পক্ষের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে পুঁজি করে যারা ক্ষমতার অপব্যবহার ব্যবহার করছে তাদের অপসারনের জন্য দাবী জানায় বরগুনার সাধারন ছাত্র জনতা। কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের কাছে এই দাবী তুললে বিশৃঙ্খলার দেখা দেয়। মীর নিলয়ের গ্রুপ ও সাধারন ছাত্র জনতার মধ্যে হাতাহাতি হয়।
এক সময় ভুয়া সমন্বয়, ভুয়া ছাত্রলীগ এই স্লোগানে মুখরিত হয় শিল্পকলা প্রাঙ্গণ। সাধারন ছাত্র জনতা বলেন সমন্বয়ের দরকার নেই। আমরা সবাই এক। আমরা এক হয়ে আন্দোলন করেছি, আমরা এক হয়ে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করব।
বরগুনার সাধারন জনগন এ্যাড শফিকুল ইসলাম ভোরের ডাককে বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যখন একদফা দাবীতে ঢাকা রাজপথ কাঁপিয়েছেন। তখন বরগুনা ছিল শান্তির শহর। বরগুনায় তেমন কেনো আন্দোলন ছিলো না। তবে এখন এত সমন্বয়ক আসলো কোথা থেকে! বরগুনা জেলার সব সময় শান্তিতে ছিলো এখনও থাকতে চায়। তাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পদ বাদ দিয়ে বরগুনার শান্তি ফিরিয়ে আনা দরকার।
বরগুনা শহরের ব্যাবসায়ী রফিক ভোরের ডাককে বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরগুনায় তেমন কোনও ভূমিকা রাখে নায়। সাধারন শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করেন। তবে সেখানে কারা কার ছিলো সবাই দেখছে সুতারং এখন এত সমন্বয়ক আসলে কোথা থেকে। ক্ষমতা পেয়ে যদি অতীত ভুলে যায় তা হলে তো হবে না। বরগুনায় শান্তি চাই। যারা নিরাপত্তা দিবে তারাই যদি বিশৃঙ্খলা করে তা হলে সাধারণ জনগণ তাদের নিজের দায়িত্ব নিজের নিতে পারবেন।
ছাত্র জনতা পক্ষে ইমতিয়াজ হাসান স্বাধীন ভোরের ডাককে বলেন, যখন আমরা প্রথম দিকে আন্দোলনে নেমেছি তখন মীর নিলয় ও মুহিত নিলয় ছিলো না। হঠাৎ এসে আন্দোলনের যুক্ত হয়ে সে এখন সমন্বয়ক পদ নিয়ে বরগুনায় নানা অপকর্ম করছেন। মীর নিলয় ছিলো ছাত্রলীগের পোষ্ট পাওয়া নেতা। মুহিত নিলয় ছাত্রদলের পোস্ট ধারী নেতা। তারা কয়েকবার তার বাহিনী নিয়ে সাধারণ ছাত্র জনতার উপর হামলা করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. রেজাউল ভোরের ডাক কে বলেন, মীর নিলয় ও মুহিত নিলয় সমন্বয়ক ছিলেন না। তারা ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছাত্রলীগের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার অসংখ্য ছবি ফেসবুকে শত শত মানুষ দেখেছে এবং তারা সমালোচনা করেছে। তিনি পিঠ বাঁচাতে সমন্বয়ক সেজেছেন। সমন্বয়ক সেজে তিনি ফ্যাসিস্টদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন। সাধারন ছাত্র জনতার উপর হামলা চালায়। সে ৪ আগস্টের তার বাহিনী নিয়ে আমার উপর হামলা চালায়,৪ জন সাধারন ছাত্র জনতা আহত হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ ভোরের ডাককে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক একজন বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তাই সবাই এখন সমন্বয়ক দাবি করছেন। আমরা কেন্দ্রীয় ভাবে কোথাও কোন সমন্বয় কমিটি দেইনি। যারা প্রকৃত এক দফা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন এবং সকল গ্রুপের সাথে আলোচনা করবো। আমরা মানুষের সাথে আলোচনা করে একটা কমিটি করে দিবো যাতে বিশৃঙ্খলা না থাকে।
বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল হালিম (সদর সার্কেল) ভোরের ডাক কে বলেন, বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি স্থানীয় ছাত্র জনতার সাথে মতবিনিময় সভা করতেছে। তবে স্থানীয়ভাবে ছাত্রদের যে মতনৈক্য ছিলো, তার বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখেছি।
বরগুনা সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শামীম মিয়া ভোরের ডাককে বলেন, এখানে একাধিক গ্রুপের কথা শুনেছি। কিছু বহিরাগতরা প্রবেশ করছিলো। এখানে কে সঠিক সেটা আমাদের দেখা বিষয় না। যারা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে আসছে তাদের নিরাপত্তা দেবার কথা ছিলো আমরা সেটা নিশ্চিত করেছি। তারা যাদের সাথে মিটিং করতে চায় আমরা তাদের ভিতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছি।