ই-পেপার বাংলা কনভার্টার শনিবার ● ৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৯ আশ্বিন ১৪৩১
ই-পেপার শনিবার ● ৫ অক্টোবর ২০২৪
Select Year: 
শিরোনাম:




ঘষামাজায় ১৪ বছর পার
ঝুলছে শিক্ষা আইন
নাজিউর রহমান সোহেল
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:৩৪ পিএম আপডেট: ১২.০৯.২০২৪ ৩:১৩ পিএম  (ভিজিটর : ২৪১)
শিক্ষা খাতের সবেচেয়ে আলোচিত ‘শিক্ষা আইন’ ২০১৭ আবারও ফেরত এসেছে। এর বাইরে শিক্ষা সংক্রান্ত আরও ৬টি গুরুত্বপূর্ণ আইনও ফেরত দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদনের জন্য এসব আইন সংশোধন করে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কারণে তার আমলে প্রণীত এসব খসড়া আইন নতুন করে পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ কারণে এসব আইন ফেরত পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
শিক্ষা আইন প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিক্ষা আইন প্রণয়নে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে চলেছে ঘষামাজা, আলোচনা-পর্যালোচনা। ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত বৈঠক হয়েছে সর্বমোট ৫৪ বার। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আইনের খসড়া তুলে দিয়ে অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়েছে অন্তত দু’বার। দেশের বরেণ্য, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, শিক্ষকসহ অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়েছে বহুবার। দীর্ঘ এ সময়ে আইনের খসড়া বারবার কাটাছেঁড়া হয়েছে। নীতিগত অনুমোদন নিতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠেছে তিনবার। এরপরও আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই আইন এখন আলোর মুখ দেখবে কি না তা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের ডাককে বলেন, দেশের অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করার কারণে প্রস্তাবিত আইনগুলো নতুন করে পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এজন্য আমরা বিগত মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য আসা আইনগুলো সংশ্লিষ্টদের কাছে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এখন এই আইনগুলোর ভবিষ্যত কি হবে সেটি দেখবে অন্তর্বর্তী সরকার। কারণ সংসদ না থাকলে/ভেঙে গেলে নতুন আইন করা যায় না। নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীতা পড়লে সেগুলো ‘অধ্যাদেশ’ আকারে তৈরি করতে হয়।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, আইনটি দফায় দফায় চূড়ান্তকরণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পতিত শেখ হাসিনা সরকারের শিক্ষা মন্ত্রীদের ‘অশুভ খপ্পর’ পড়েছিল আইনটির ওপর। নোট-গাইড ও কোচিং ব্যবসায়ীদের অবৈধ ব্যবসা হালাল করার জন্য আইনটি পাসে জোরালো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিদায়ী সরকারের মন্ত্রিসভা ভেঙে যাওয়ায় অভিভাবক মন্ত্রণালয়ের কাছে আইনটি ফেরত আসলো।
ফেরত আসা আইনগুলো হলো- শিক্ষা আইন- ২০১৭, উচ্চ শিক্ষা কমিশন আইন- ২০২৮, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন-২০১৮, শেখ হাসিনা ভাষা-গবেষণা ট্রাস্ট আইন- ২০২১, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০২৩, বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন ও নিয়োগ সুপারিশ কর্তৃপক্ষ আইন-২০২৪ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড আইন-২০২১।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব (আইন-১) ও বর্তমানে ঢাকা জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া তানভীর আহমেদ ভোরের ডাককে জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিগত সরকারের আমলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আসা আইনগুলো আমরা শুধু অভিভাবক মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। তেমনি শিক্ষার প্রস্তাবিত আইনের খসড়াগুলোও তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
গত ২৭ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রেক্ষাপটে খসড়া বিলসমূহ পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত খসড়া আইনগুলো পর্যালোচনা ও সুপারিশের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়া আইনগুলো ভবিষ্যৎ নির্ধারণে পরবর্তীতে অভিভাবকরা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিরীক্ষা ও আইন) মুখেশ চন্দ্র ভোরের ডাককে বলেন, ফেরত আসা প্রস্তাবিত খসড়া আইনগুলো নিয়ে দ্রুত বৈঠক করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও বিভিন্ন অংশীজনদের মতামত নিয়ে এগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করা হবে বলেও জানান তিনি।
১৪ বছর যেভাবে ঝুলে যায় শিক্ষা আইন
২০১০ সালে সংসদে জাতীয় শিক্ষানীতি পাস হয়। এ নীতিতে বলা হয়েছিল, নীতিগুলো বাস্তবায়ন করতে একটি আইন দরকার। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে ২৪টি উপকমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়; যার একটি ছিল শিক্ষা আইনের খসড়া প্রণয়ন। এরপর চার-পাঁচ দফা শিক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। ‘ছায়া শিক্ষার’ নামে কোচিং, প্রাইভেট টিউশনের বৈধতা এবং নোট-গাইডের নামে অনুশীলন বা সহায়ক বইয়ের উল্লেখ থাকায় এবং নানা ‘অসংগতি’ ও ‘দুর্বল’ খসড়ার কারণে তা ফেরত পাঠায় মন্ত্রিসভা। পরে বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে শিক্ষা আইনের খসড়াটি ফের পর্যালোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং সাবেক একজন সচিবকে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২২ সালে দু’বার কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করতে শিক্ষা আইনের খসড়া ফেরত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সবশেষ ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের চতুর্থ মেয়াদ শুরু হলে আইনটি অনুমোদনের জন্য আবারও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। পরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ২৭ আগস্ট শিক্ষা আইনসহ শিক্ষার ৭টি আইন ফেরত আসে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, এই ১৪ বছরে সংশ্লিষ্ট কেউই এ আইন প্রণয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখেনি। কোচিং, নোট-গাইড ব্যবসায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য ও ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের অদৃশ্য চাপেও আইন প্রণয়ন বারবার গতি হারিয়েছে। ‘ছায়া শিক্ষার’ নামে দেশে কোচিং, প্রাইভেট টিউশনের বৈধতা এবং নোট-গাইডের নামে অনুশীলন বা সহায়ক বইয়ের বৈধতা দিতে এ সংশ্লিষ্ট একটি মহলের অশুভ তৎপরতায় আইনটি বারবার বাঁধার মুখে পড়ে।
নাম না প্রকাশের শর্তে শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির একজন সদস্য গতকাল ভোরের ডাককে বলেন, এটা অদক্ষতা বলবো না, ইচ্ছাকৃতভালে শিক্ষা আইনটি করা হয়নি। যারা রাজনীতি করে ক্ষমতায় বসেন - তাদের সাথে আমলাতন্ত্রের অমিল থাকায় আইনটি হয়নি।
আইনের খসড়ায় যা আছে 
সবশেষ প্রণীত শিক্ষা আইনের খসড়ায় চার স্তরের শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক, দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিক স্তর। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হবে উচ্চশিক্ষা স্তর। তবে শিক্ষা আইনের এই প্রস্তাবের সঙ্গে শিক্ষানীতির অমিল রয়েছে। অবশ্য শিক্ষা আইনে প্রাক-প্রাথমিক স্তরের কথা বলা হয়েছে, যেখানে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর জন্য সরকার পর্যায়ক্রমে মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করবে। আইনে উচ্চ শিক্ষা স্তরের প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে শুধু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই বলা হয়েছে, স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়েরও কোনো স্পষ্ট উল্লেখ নেই। 
এ আইনে দেশের সকল শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক এবং শিশুর মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। এ ছাড়াও এতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাদানের উপযুক্ত ব্যবস্থা, কারও প্রতি কোনো বৈষম্য না করা, অনগ্রসর এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং নিরাপদ ও শিশুবান্ধব শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এ আইনে বলা হয়, মাধ্যমিক শিক্ষার ধারা হবে তিনটিÑ সাধারণ শিক্ষা, মাদ্রাসা এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা। আইনে ইংরেজি মাধ্যমের বা বিদেশি পাঠ্যক্রমের শিক্ষা সম্পর্কে বলা হয়, সাধারণ ধারার সমপর্যায়ের বাংলা, বাংলাদেশের অভ্যুদয়, বাংলাদেশ স্টাডিজ এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বিষয়গুলো সেখানে বাধ্যতামূলকভাবে পড়াতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করা হবে। বিদেশি পাঠক্রমে পরিচালিত স্কুল, কিন্ডারগার্টেন ও মাদ্রাসা অথবা বিদেশি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে শাখা স্থাপন বা পরিচালনার জন্য নিবন্ধন করতে হবে। বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সনের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন, টিউশন ও অন্য ফি অযৌক্তিকভাবে উচ্চহারে আদায় করা হয়েছেÑ এমন প্রতীয়মান হলে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। এতে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার কথাও বলা হয়েছে। 





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]