ই-পেপার বাংলা কনভার্টার বৃহস্পতিবার ● ১০ অক্টোবর ২০২৪ ২৪ আশ্বিন ১৪৩১
ই-পেপার বৃহস্পতিবার ● ১০ অক্টোবর ২০২৪
Select Year: 
শিরোনাম:




পাকিস্তানকে হোয়াইওয়াশ করে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় বাংলাদেশের
সফিকুল হাসান সোহেল :
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩:৩৭ পিএম আপডেট: ০৩.০৯.২০২৪ ৬:৫৪ পিএম  (ভিজিটর : ১০৩২)
পাকিস্তানে কোনো ফরম্যাটেই জয় ছিল না বাংলাদেশের। এবার নতুন ইতিহাস রচনা করল টিম টাইগার্স। টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাফল্য উপহার দিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। বাবর আজমদের হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশের মানুষকে ভাসিয়েছে আনন্দের জোয়ারে। নির্ভয়ে, নির্ভারে, বুক চিতিয়ে লড়াই করে, চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় অপ্রতিরোধ্য পারফরম্যান্সের ছবি এঁকে এবার সিরিজ জয়ের অমূল্য স্বাদ পেল বাংলাদেশ। যেখানে পাকিস্তানের সাথে একটি ম্যাচ জয়ের চিন্তা ছিল দূর আকাশের তারা হাতে পাওয়ার মতো, সেখানে তাদেরকে হোয়াইটওয়াশ করা রীতিমতো এভারেস্ট জয় করার সমতুল্য। সেটাই করলো বাংলাদেশ। 

এদিকে ঐতিহাসিক মুহূর্তে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। টেস্টে বাংলাদেশের সাফল্য এসেছে কালেভদ্রে। লম্বা সময় পরপর। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজসহ প্রায় সব বড় দলকেই হারিয়েছে বাংলাদেশ। তবে পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার ছিল বড্ড অভাব। টেস্ট মেজাজ গড়ে না উঠা, পরিকল্পনায় ঘাটতি, টেস্টে নিবেদন নিয়ে ছিল প্রশ্ন। সর্বোপরি টেস্ট আভিজাত্যের সঙ্গে খেয়ালি এক সম্পর্ক ছিল। সব পেছনে ফেলে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে নতুন এক সূর্যোদয় হলো। যে আলোয় আলোকিত হবে চারপাশ, এমন কিছুর স্বপ্নেই বিভোর গোটা বাংলাদেশ। অভিষেকের ২৪ বছর পর অন্তত পায়ের নিচের জমিন শক্ত হলো তা বলতে দ্বিধা থাকলো না। বাংলাদেশের পাকিস্তান দূর্গ জয় নিশ্চিতভাবেই টেস্ট ক্রিকেটে নতুন সঞ্জীবনী সুধা এনে দিবে। 

গতকাল ম্যাচের শেষদিন সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে গুলির বেগে বল ছুটে গেল বাউন্ডারিতে। স্টাম্প মাইকে শোনা গেল গর্জন। নিশ্চিতভাবেই তা মুশফিকুর রহিমের বজ্র হুঙ্কার! টিভি পর্দায় দেখা গেল, ড্রেসিং রুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন নাজমুল হোসেন শান্তও। মাঠ থেকে ড্রেসিং রুম হয়ে পুরো মাঠে, রাওয়ালপিন্ডি হয়ে গোটা পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ল যেন সেই আওয়াজ। পাকিস্তানের বুকে বাংলাদেশের বিজয় উল্লাস! জয়ের সুবাস মেখে যে দিনের শুরু, স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটায় সেই আবেশে মাখামাখি হলো বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তানকে ৬ উইকেট হারিয়ে ঐতিহাসিক এক সিরিজ জয়ে নিজেদের রাঙাল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। দেশের বাইরে বাংলাদেশের মাত্র দ্বিতীয় সিরিজ জয় এটি। তবে পূর্ণ শক্তির কোনো দলের বিপক্ষে এটিই প্রথম। 

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ২-০ ব্যবধানে জিতলেও সেবার চুক্তি সংক্রান্ত ঝামেলায় খেলেননি শীর্ষ ক্রিকেটারদের কেউ। বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছিল দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে। এবারের জয় তাই অনেক বেশি স্পেশাল, আরও বেশি স্মরণীয়। হাতে ১০ উইকেট রেখে ১৮৫ রানের লক্ষ্য ছুঁতে পঞ্চম দিনে ১৪৩ রানের প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সফরকারীদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ ছিল প্রকৃতি। সেই লক্ষ্যে খুব দ্রæততায় ছুটতে পারেনি দল। তবে প্রয়োজনও পড়েনি। ম্যাচ সবসময়ই ছিল নিয়ন্ত্রণেই। রান তাড়ায় কখনও মনে হয়নি বাংলাদেশ হারতে পারে। ফিফটি করতে পারেননি কোনো ব্যাটসম্যান। কয়েকজনের অবদানে বেশ সহজেই জিতে গেছে বাংলাদেশ। 

গোটা সিরিজেরই প্রতীকী বলা যায় এই শেষ ইনিংস। সম্মিলিত দলীয় পারফরম্যান্সের জয়গান গেয়েই অসাধারণ এই সিরিজ জয়ের সাফল্য ধরা দিয়েছে। নিজেদের সুদীর্ঘ টেস্ট ইতিহাসে আগে কেবল একবারই দেশের মাঠে হোয়াইটওয়াশড হয়েছিল পাকিস্তান। ২০২২ সালে তারা তিন ম্যাচের সিরিজের সবকটি হেরেছিল ইংল্যান্ডের কাছে। এই দিনের বাস্তবতায় বাংলাদেশের জয়টাই ছিল সবচেয়ে সম্ভাব্য ফল।

 কিন্তু ম্যাচের তৃতীয় দিনে (কার্যত যা ছিল দ্বিতীয় দিন) ফিরে গেলে, ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছিল বাংলাদেশ, মান বাঁচানোই যখন মনে হচ্ছিল বড় দায়, সেখান থেকে এভাবে ম্যাচ জয় তো রূপকথার মতোই। বাংলাদেশের ইতিহাসে তো বটেই, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসেই আলাদা জায়গা নিয়ে থাকবে এই জয়। প্রথম ইনিংসে এত কম রানে ৬ উইকেট হারিয়েও জয় টেস্ট ক্রিকেটে দেখা গেল ১৩৭ বছর পর! সেই ১৮৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ও পরে ৪৫ রানে অলআউট হয়েও শেষ পর্যন্ত ১৩ রানে ম্যাচ জিতেছিল ইংল্যান্ড। এবার বাংলাদেশও এই রেকর্ডে তাদের সঙ্গী।

 দিনের শুরুতে পাকিস্তানি পেসারদের বোলিং ছিল বেশ আঁটসাঁট। দ্বিতীয় বলে সাদমান ইসলাম একটি চার মারলেও পরে শট খেলার সুযোগ খুব একটা পাননি দুই ব্যাটসম্যান। সকাল থেকে দারুণ বোলিং করতে থাকা মির হামজা পাকিস্তানকে এনে দেন প্রথম সাফল্য। তার দুর্দান্ত ডেলিভারি জাকির হাসানের ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে ছোবল দেয় স্টাম্পে। আগের দিন ২৩ বলে ৩১ রান করা ওপেনার আউট হন ৩৯ বলে ৪০ রান করে। একটু পর হামজার বলেই রক্ষা পান সাদমান। স্লিপে কঠিন ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি সালমান আলি আঘা। তবে পরের ওভারেই ফাঁদে পা দেন এই ওপেনার। বারবার তাকে ড্রাইভ করতে প্রলুব্ধ করছিলেন পাকিস্তানি বোলাররা। ড্রাইভ খেলেই মিড অফে সহজ ক্যাচ দেন তিনি ২৪ রান করে। এরপর কিছটা অস্বস্তিময় সময় এসেছে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হকের জন্য। ব্যাটের কানায় লেগেছে বল, স্লিপ দিয়ে গলে গেছে কয়েক দফায়। তবে সব সামলে রানও বাড়াতে থাকেন দুজন। লাঞ্চের আগে জুটি পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ। লাঞ্চের পরপর শান্তকে হারায় বাংলাদেশ। সালমানকে রিভার্স সুইপে চার মারার পরের বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক (৮২ বলে ৩৮)। টানা ৯ ইনিংসে ফিফটির দেখা পেলেন না তিনি। এর চেয়েও বড় আক্ষেপ হতে পারে এ দিন, জয়ের মুহূর্তটায় থাকতে পারলেন না ক্রিজে। সেই সুযোগটি হারান মুমিনুলও। দীর্ঘক্ষণ লড়াই করে এক প্রান্ত থেকে দলকে টানছিলেন তিনি। ব্যাট করছিলেন বেশ সতর্কতায়। কিন্তু হঠাৎ আবরার আহমেদকে তুলে মেরে উইকেট হারান তিনি ৩৪ রানে (৭১ বলে)। মুশফিকু রহিম ও সাকিব আল হাসান সেই ভুল করেননি। দলের অভিজ্ঞতম দুই ক্রিকেটার আস্তে আস্তে দলকে নিয়ে যায় কাক্সিক্ষত ঠিকানায়। জয় নাগালে থাকার পরও অনেক সময় নিয়েছেন দুজন। ৩২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি এসেছে ১২ ওভারে। তাতে হয়তো অধৈর্য হয়ে উঠেছেন কেউ কেউ, অনেকেই হয়েছেন অস্থির। বৃষ্টির শঙ্কা মাথায় রাখলে, আরেকটু চালিয়ে হয়তো খেলতে পারতেন দুজন। তবে কখনও কখনও এভাবে ধীরে ধীরে জয়ের দিকে যাওয়াও কম তৃপ্তির নয়। ব্যর্থতা ও হতাশার অনেক প্রহর পেরিয়ে বাংলাদেশ এবার সত্যিই পেরেছে বিজয় নিশান ছড়িয়ে দিতে, পাকিস্তানে যেমন, তেমনি ক্রিকেট বিশ্বেও। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম জয়টা এসেছিল ১০ উইকেটে। এবার ৬ উইকেটে। তাতে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে পাকিস্তানকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে আরো ১২ পয়েন্ট নিশ্চিত হলো। সঙ্গে গর্ব, সম্মান, ঐশ্বর্য্য যোগ হয়ে প্রাপ্তির ঝুলি একেবারে টইটুম্বুর। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ২৬২ ও (লক্ষ্য ১৮৫, আগের দিন ৪২/০) ১৮৫/৪ (জাকির ৪০, সাদমান ২৪, শান্ত ৩৮, মুমিনুল ৩৪, মুশফিক ২২*, সাকিব ২১*; হামজা ১৪-৪-৪৬-১, শাহজাদ ৭-০-৪০-১, আবরার ১৪-৩-৪০-১, আলি ১৭-৩-৩৭-০, সালমান ৪-১-১৭-১)
পাকিস্তান : ২৭৪ ও ১৭২
ফলাফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ২ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ : লিটন কুমার দাস।
ম্যান অব দা সিরিজ : মেহেদী হাসান মিরাজ।

পুরো জাতি তোমাদের নিয়ে গর্বিত : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ঐতিহাসিক মুহূর্তে অধিনায়ক শান্তকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের সহকারী ইনচার্জ, বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফীস। বাংলাদেশের সাবেক ওপেনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অফিস থেকে মাত্র ফোন পেলাম। শান্তকে ফরওয়ার্ড করে দিয়েছি। বাংলাদেশ দলকে অনেক অনেক অভিনন্দন।

প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকেও একটি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সরকার ও আমার পক্ষ থেকে হৃদয় নিংড়ানো অভিনন্দন। পুরো জাতি তোমাদের নিয়ে গর্বিত। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দেশে ফেরার পর বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে সংবর্ধনা দেয়ার কথাও।








সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]