ই-পেপার বাংলা কনভার্টার শনিবার ● ৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৯ আশ্বিন ১৪৩১
ই-পেপার শনিবার ● ৫ অক্টোবর ২০২৪
Select Year: 
শিরোনাম:




ডলারের জোগান বাড়ছে:
স্বস্তি ফিরছে বিদেশি মুদ্রা ব্যবস্থাপনায়
এসএম শামসুজ্জোহা:
প্রকাশ: রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:২০ পিএম  (ভিজিটর : ৪৪৪)
ডলার বাজারে স্বস্তির খবর। প্রবাসী আয় রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ায় বাজারে ডলারের দামে আংশিক স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। জুলাইয়ে অস্থিরতার মধ্যেও রেমিট্যান্স এসেছে ১৯১ কোটি ডলার। চলতি আগস্টে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বেড়েছে। যা চলতি মাসে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আবার ডলারের সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানান পদক্ষেপের সুফল আসতে শুরু করেছে। যার প্রভাবে কমতে শুরু করেছে ডলারের দাম। 

দেশে ডলারের সংকট উত্তরণে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে অন্যতম আমদানি। এখানে নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে নীতিগত ছাড় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ডলার কারসাজিকারীদের ধরতে চালাচ্ছে অভিযান। অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি হালনাগাদ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে গত আড়াই বছর ধরে দেশে ডলারের প্রচন্ড সংকট ছিল। এতে ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২৪ টাকা হয়েছে। জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশ থেকে আমদানি-রপ্তানির নামে ও অনলাইনে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার পাচার বহুলাংশে কমেছে। একই সঙ্গে রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে, কমেছে আমদানি ব্যয় ও ঘাটতির পরিমাণ। বৈদেশিক অনুদান আসার পরিমাণও বাড়তে শুরু করেছে। এসব মিলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে খরচ কিছুটা কমেছে। এছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পাওয়ার প্রবণতাও কমেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ফলে আংশিক স্বস্তি ফিরেছে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায়।

 সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জুলাইয়ের মধ্য ভাগ থেকে ছাত্রদের আন্দোলনের কারণে ব্যাংক খাতে লেনদেনে স্থবিরতা বিরাজ করছিল। ওই সময়ে ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলার হার যেমন কমেছে, তেমনি বৈদেশিক লেনদেনও কমেছে। এতে টাকা পাচারও কম হয়েছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নতুন সরকার দায়িত্বভার নিয়েছে ৮ আগস্ট। ওই সময় থেকে ব্যাংক খাতে লেনদেনে কড়াকড়ি আরোপ করে। এতেও এখন পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা পাচার কম হয়েছে। এতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বেড়েছে। রপ্তানি আয় দেশে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে এ খাতে আয় বাড়ছে। জুনের রপ্তানির আয়ের বৈদেশিক মুদ্রা এখন দেশে আসছে। এর আগের ও পরে রপ্তানি করা পণ্যের মূল্যও আসছে। এতে রপ্তানি আয় রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। জুনে দেশে রপ্তানি আয় এসেছে রেকর্ড পরিমাণে ৭১৩ কোটি ডলার। যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। 

আগে জানুয়ারিতে রপ্তানি আয় এসেছে সর্বোচ্চ ৫৭২ কোটি ডলার। এরপর মার্চ পর্যন্ত ৫০০ কোটি ডলারের বেশি করে প্রতি মাসে আয় এসেছে। এপ্রিল থেকে এ আয় ৫০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে যায়। মে মাসে রপ্তানি আয় এসেছে ৩৬৭ কোটি ডলার। জুনে তা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১৩ কোটি ডলারে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ডলার সংকট মোকাবিলায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও জাইকা থেকে অতিরিক্ত ১০০ কোটি ডলার, বিশ্বব্যাংক থেকে ১৫০ কোটি ডলার ও আইএমএফ থেকে চলতি প্যাকেজের পাশাপাশি আরও ৩০০ কোটি ডলার সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, এসব খাত থেকে ডলারের জোগান এলে বাজারে এর প্রবাহ বাড়বে। ফলে সার্বিকভাবে ডলার সংকট কেটে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল হবে। এতে একদিকে টাকার মানের ওপর চাপ কমবে। অন্যদিকে উৎপাদন খাত চাঙা করা সম্ভব হবে। তারল্যের সংকটও কমবে। এর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির চাপও কিছুটা কমে আসবে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় হয়েছিল ৭ হাজার ৭৫ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে তা কমে ৬ হাজার ৩২৪ কোটি ডলার হয়েছে। ওই সময়ে আমদানি ব্যয় কমেছে ৭৫১ কোটি ডলার। শতকরা হিসাবে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ। তবে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। আগের বকেয়া দেনা শোধ করতে এখন ডলারের জোগান ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সাধারণত ডলার দেওয়া হচ্ছে না। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় উলটো কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন বাজার থেকে ডলার কিনে নিচ্ছে। ফলে রিজার্ভে স্থিতিশীলতা এসেছে। আগস্টে রিজার্ভ কমেনি। বাড়েওনি। স্থিতিশীল রয়েছে। এর মধ্যে থেকেই বৈদেশিক ঋণ ও আমদানির দায় পরিশোধ করা হচ্ছে। 

বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ২০৪৮ কোটি ডলার। যা দিয়ে ৪ দশমিক ৪ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, রিজার্ভে বড় চাপ আসে আমদানির এলসি খুলে দেনা শোধ করার পরও পণ্য দেশে না এলে। অর্থাৎ ডলার পাচার হয়ে গেলে। এভাবে প্রতি মাসে হাজার হাজার ডলার পাচার হয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে। এ পাচার বন্ধ হলে রিজার্ভে চাপ কমে যাবে।

 এছাড়া অন্য চাপগুলো সহজেই মোকাবিলা করা যায়। কিন্তু পাচারের চাপ মোকাবিলা করা সম্ভব হয় না। প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়ায় এবং খরচের চেয়ে আয় বেশি হওয়ায় বিভিন্ন খাতে ঘাটতিও কমে এসেছে। আমদানি কমায় ও রপ্তানি বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতি কমছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছিল ২ হাজার ৭৩৮ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৪৩ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে ঘাটতি কমেছে ৪৯৫ কোটি ডলার। শতকরা হিসাবে ১৮ দশমিক ০৮ শতাংশ। রপ্তানি বাড়ায় আগামীতে এ ঘাটতি আরও কমতে পারে। 

চলতি হিসাবে ঘাটতি কমেছে সা¤প্রতিক সময়ে ডলারের জোগান বাড়ার কারণে। বিশেষ করে আগের বকেয়া আয়সহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা এখন দেশে আসছে। এতে ব্যাংকগুলোতে ডলারের জোগান বেড়েছে।

 এ বিষয়ে মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর মহাসচিব মো. হেলাল সিকদার বলেন, মানি চেঞ্জারদেরকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গড় রেট থেকে এক টাকা বেশি দামে ডলার ক্রয় করে সর্বোচ্চ দেড় টাকা মুনাফা করতে বলা হয়েছে। নিয়ম না মানলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ডলারের সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে। আশা করছি শিগগিরই বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]