প্রকাশ: বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪, ১:৫৫ পিএম (ভিজিটর : ৭৩৭)
মুলত সম্মান দেনেওয়ালা ঐ মহান প্রতিপালক। তিনিই সম্মান দেন আবার কেড়েও নিতে পারেন। অল্প কদিন আগেও তিনি মন্ত্রী ছিলেন। যেইসেই মন্ত্রী নয় প্রভাবশালী আইনমন্ত্রী। আরেকজন বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি সালমান এফ রহমান। তারা বাহিরে কত সম্মানিত ছিলেন এখন তাদের ভেতরের নোংরা চেহারাটা উন্মোচিত হলো।
গণমাধ্যমে যখন দেখলাম সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, এবং সালমান এফ রহমান খুব লজ্জাজনক অবস্থায় গ্রেফতার হয়েছেন। প্রখ্যাত ব্যবসায়ী দাঁড়ি ফেলে দিয়েছেন আইনের হাত থেকে বাঁচাতে অথচ ঠিকই তার হাতে হাতকড়া পড়ে গেছে। সাবেক শিক্ষান্ত্রী দিপু মনি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছেন। কোনদিন ভাবেননি তার এই অবস্থা হবে। আপিল বিভাগের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক । কি দম্ভিকতা তার। কদিন আগে একটি টকশোতে তিনি ভাইরাল হয়েছিলেন এবং তার চরিত্র সর্ম্পকে দেশের মানুষ অবহিত হয়েছে। এই অপশক্তিশালী মানুষটাই যখন জঙ্গলে কলাপাতার তোষকে শুয়ে রইলো তখন বাঙ্গালী আর চুপ থাকতে পারলো না এই বিষয়টাকে আবারো ভাইরাল করে দিলো। সাবেক তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সহ আরো অনেকেই আছে যাদের ক্ষমতার অপচয়ের ফলে নিজেরাই ফেঁসে গেছেন। এদের এই দৃশ্যটা দেখে প্রখ্যাত ঐ মূলবান উক্তিটি মনে পড়ে গেলো “সকাল বেলার ধনীরে তুই ফকির সন্ধ্যা বেলা।” এই মানুষগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। না আছে তাদের ধন দৌলতের অভাব । না আছে যশ-খ্যাতির অভাব। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার আর দাম্ভিকতা আর অপকর্মের ফলে জাতির কাছে আজ কতই না নিন্দনীয় তারা। সালমান এফ রহমানের শ্রীবৃদ্ধি করা দাড়িগুলো ফেলে দিয়েছেন তিনি। এত ভয় কিসের ? যদি অন্যায় না থাকতো তাহলে ভয়ের কিছু নাই।
জেলখানা ভালোদের জন্য নাজাতের পথকে আরো মশৃন করে দেয়। কিন্তু যারা অপরাধী তাদের বেলায় একটা শাস্তির জায়গা। ভালো মানুষের জন্য ইবাদত খানায় পরিণত হয় এটি। আসলে এরা দোষী ছিলো বলেই এতো ভীতু ছিলো। আসলে আমরা হচ্ছি লোভী। আর লোভীর পেট কখনো ভরে না। আমার একজন ঘনিষ্ট বন্ধু আমাকে একটা গল্প শুনিয়েছিলেন।
গল্পটি হলো: এক সাধু পাহাড়ে বসে ধ্যানে মগ্ন থাকে। এই কথা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়ার ফলে ইতিমধ্যেই তার অনেক ভক্ত তৈরী হয়েছে। একদিন এক ভক্ত এসে বললো। বাবা, আমি তোমার কাছে এসেছি । সাধু বললেন কেন? তারপর সে ধনী হতে চায় এমন আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করলো। সাধু পাশের পাহাড়টি দেখিয়ে বললো ঐ পাহাড়ে তোমার কাঙ্ক্ষীত বস্তু আছে। নিয়ে যাও। সে পাহাড়ে গিয়ে দেখলো সত্যিই হিরা-মণি-মুক্তা-স্বর্ণ সহ মহামূল্যবান সম্পদ এই পাহাড়ের চুড়ায় লুকিয়ে আছে। সে ইচ্ছেমত তার জামা এবং প্যান্টের পকেট ভর্তি করলো। আপসোস হচ্ছে তার এজন্য যে, সে কোন ব্যাগ নিয়ে যায়নি। সে দৌড়ে এসে দেখলো সাধুর কাছে ওজুর একটি পাত্র ছাড়া আর কোনকিছু নেই। সে বললো বাবা এটি আমাকে দিয়ে দাও। তারপর সাধু বললো আচ্ছা ঠিক আছে, নিয়ে যাও। এই লোকটি পাত্রসহ আবারো ঐ পাহাড়ে গেলো এবং ইচ্ছেমত হীরা মনি মুক্তা এই পাত্রে ভরতে থাকলো কিন্তু আশ্চর্য্যরে বিষয় হলো। পাত্রের ভেতরে হীরা মণি মুক্তা যতই দেয়া হচ্ছে পাত্র আর ভরছে না। একটা ছোট পাত্র। দুইহাতে মহামূলবান জিনিসগুলো দেয়া হচ্ছে। তবুও পাত্র খানিক বাকীই থেকে যাচ্ছে। পাত্রটা পূর্ণ হচ্ছে না। অপারক হয়ে এই লোক আবার সাধুর কাছে গেলো এবং বললো বাবা সেই সকাল থেকে এই পাত্রটি ভরতে চেষ্টা করছি। তবুও ভরছে না। তখন প্রায় সন্ধ্যে ঘনিয়ে এলো। সাধু উত্তর দিলেন। আসলে লোভীর পেট কখনো ভরে না।
যিনি শিল্পপতি তিনিতো এমনিতেই সম্মানের পাত্র । বাংলাদেশের খ্যাতিমান কোম্পানী গুলোর মধ্যে তার অংশিদারিত্ব নজর কাড়ার মত। তিনি সফল ব্যবসায়ী বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে আর্ন্তজাতিক ব্যবসা বাণিজ্যেও তার বহু সুনাম। কি দরকার ছিলো এই মানুষের রাজনীতিতে আসার। আর আসলোই যখন তখন সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যত্যয় কেন ঘটলো। আমি মনে করি রাজনৈতিক মানুষের রাজনীতি করা উচিৎ। অনেক সময় দেখা যায় একজন আর্ন্তজাতিক মানের খেলোয়ার কে সংসদ সদস্য বানিয়ে দেয়া হচ্ছে। আর এতে করে ক্রীড়াঙ্গনে তার যে পারপরমেন্স ছিলো ধীর ধীরে তা তিনি হারিয়ে ফেলছেন। একজন শিল্পী সাংস্কৃতিক আকাশে তার যে অবদান এখান থেকেও তাকে রাজনীতিতে টেনে এনে প্রতিভার বারোটা বাজিয়ে দেয়া হচ্ছে। শেষমেষ হিমশিম খেয়ে অপশাসনের অভিযোগে নিজের অস্থিত্ব বিলিনের ভয়ংকর অবস্থা তৈরী হয়। এর থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
সালমান এফ রহমান এবং মানিকের এই ভয়াবহ অবস্থা দেখে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। অপশাসনের জন্য আকাশছোঁয়া মানুষ ধপ করে মাটিতে পড়ে গেলো আর একই অবস্থা দেখুন বর্তমান সময়ে তারুণ্যের প্রতীক নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ সজিব ভূইয়াকে। তারা কিন্তু এখনো পড়াশুনা কমপ্লিট করেনি । তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। দেখুন মহান আল্লাহ কি না পারে। তিনি সব পারেন। সম্মানের আসনে তাদেরকে বসিয়েছেন। জাতির অহংকার হয়ে গেছে এই শিক্ষার্থীরা। তারা একটা দীর্ঘ সময়ের স্বৈরশাসককে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। আজ তারা সম্মানিত।
আর যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। মানুষকে মানুষ মনে করেনি । অহংকার, দাম্ভিকতা আর অপকর্ম জেঁকে বসেছিলো যাদের কাঁধে। তারা আজ বড়ই অসম্মানিত। আইনমন্ত্রী হলে কি হবে বেআইনি কাজের ফলে তার হাতেই পড়েছে আইনের হাতকড়া। শাসকের পর শাসক আসে কিন্তু ক জন বেঁচে থাকে জনতার হৃদয়ে। সবাই বাঁচে না। কেউ কেউ বেঁচে থাকে হৃদয়ে হৃদয়ে। পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করে মানুষ এই রাজার নাম। আর কেউ কেউ ঘৃনিত হয়ে বেঁচে থাকে। তিরস্কার করে এই রাজার নাম মুখে আনে জনতা। এই উত্থান পতন থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। দুনিয়ার ধনদৌলত দুনিয়াতেই পড়ে থাকে। এখান থেকে কেউ নিয়ে যেতে পারে না। এগুলো কেবল পাহাড়া দেয়। ঠিক তদ্রুপ পিতাও যেমন পাহাড়া দিয়েছে। ক্ষমতা বনের সিংহটারও থাকে কিন্তু যখন সে বৃদ্ধ হয়ে যায় তখন ধীরে ধীরে সে নিস্তেজ হতে থাকে। আর সে পারে না যৌবনের মত হুংকার দিতে।
এইতো জীবন, সে মানুষের হোক অথবা হিংস্র কোন প্রাণীর। জীবন তো চলমান। সকলের বেলায়ই এক। সুতরাং আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সততা এবং নিষ্ঠার সাথে এগিয়ে গেলে দুনিয়ার কোন শক্তিই বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারে না। সততায় ঠিকে থাকতে একটু কষ্ট হলেও দাঁড়িয়ে গেলে পরে আর কোন বাধাঁই বাধাঁ হয়ে দাড়াতে পারে না। সফলতার হাত তাকে শক্ত করে ধরে রাখে। এ জন্য আমাদের অবশ্যই সত্যের বেলায় কোন আপোষ চলবে না। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার প্রবণতা নিজের মধ্যে তৈরী করতে হবে।