প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৪, ১:০০ পিএম আপডেট: ০৫.০৯.২০২৪ ৩:৫৫ পিএম (ভিজিটর : ৪৫৭)
বানভাসি বিপন্ন মানুষের পুনর্বাসন প্রস্তুতি সম্পর্কে কোথাও কোনো তথ্য নেই। দেশের ১৩টি জেলার ৪৫ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত। এসব জেলার আমন আবাদ এরমধ্যেই ধ্বংস হয়ে গেছে। নতুন করে কৃষি-পুনর্বাসনের প্রস্তুতিরও কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এরমধ্যেই সপ্তাহকাল পার হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাবার উল্লেখযোগ্য কোনো খবর নেই। পানি নেমে যাবার কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের ঘরে ফেরা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর তখনই এসব জনপদে শুরু হবে নতুন করে বেঁচে থাকার লড়াই। প্রয়োজন হবে পুনর্বাসন সহায়তা।
দুর্যোগ দুর্ভোগে আপনজনের উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সাথে সারাদেশের মানুষের মানবিক সহায়তা বরাবরের মতোই এবারও সরকারি পদক্ষেপের অপেক্ষা করেনি। অসহায় মানুষকে উদ্ধার, আশ্রয় ও খাবার নিয়ে এখনও উপদ্রুত এলাকায় দলে দলে ছুটছে তারা। এবারের এই দুঃসময়ে দেশের আপামর জনসাধারণ যেভবে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তা অভূতপূর্ব। জাতীয় জীবনে এ আবেগের গুরুত্ব অপরিসীম। তথাপি শহর, উপশহর, হাট-গঞ্জ-বন্দর সংযোগকারী সড়কের বাইরে প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদে ত্রাণের জন্য এখনও চলছে হাহাকার। বিশেষত প্রতিবেশীর উঁচু পাকাবাড়ি, স্থানীয় মসজিদ কিংবা স্কুল ঘরে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলোতে। দু’চার দিনের মতো চাল ডালের সংস্থান হাতে নিয়ে ঘর-গৃহস্থলি ফেলে আসা অনেকেরই পানযোগ্য পানি এবং রান্নার জন্য জ্বালানি সংকটে দিশেহারা অবস্থা। ত্রাণকাজে যুক্ত অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবী এলাকার বাইরে থেকে আসা। দূরদূরান্তের গন্তব্য তাদের অজানা। বিভিন্ন আশ্রয়ে থাকা অসহায় পরিবারগুলো খুঁজে ফেরার জন্য নেই পর্যাপ্ত নৌকা।
বন্যাকালীন উদ্ধার তৎপরতা, খাদ্য পানীয়, নিরাপদ আবাসন প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। পানি নামতে শুরু করলে আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ সামনে চলে আসে। ডুবে যাওয়া টিউবওয়েল দূষণমুক্ত করা, বিনষ্ট ঘরবাড়ি মেরামত, কৃষি পুনর্বাসন, বন্যা-পরবর্তী স্বাস্থ্য, স্কুলঘরগুলো পাঠ উপয়োগী করা। যেসব কাঁচাঘর মাটির সাথে মিশে যাবে সেগুলো নতুন করে নির্মাণ করে দেয়া ছাড়া অনেকেরই ফিরে যাবার উপায় থকেবে না। গরিবের দুর্বল বাঁশের বেড়ার ঘর একটিও আর অবশিষ্ট থাকবে না। সেগুলোর জন্য নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবস্থা করে নতুন ঘরবাড়ি তৈরি ও মেরামত একটি বড় কাজ হিসেবে দেখা দেবে। একইভাবে দরকার হবে প্রাইমারি ও হাই স্কুলগুলোর পুনর্বাসন এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসক।
এ রকম অনেক কাজ কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু করতে হবে। প্রয়োজন হবে অনেক অর্থ। ত্রাণ তৎপরতার জন্য এখন অনেকে অনেকভাবে সাহায্য করছেন। পানি নেমে যাবার পর প্রতিটি বানভাসি পরিবারের পুনর্বাসন জরুরি হয়ে পড়বে। মানুষের অসহায়ত্ব তীব্রতর হবে তখন। বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনে যে বিপুল অর্থ প্রয়োজন হবে, তার সূচনা হবে মানুষের স্ব-স্ব বসতবাড়িতে ফেরার সময় থেকেই। কিন্তু পূর্বপ্রস্তুতি না থাকলে মানুষের প্রকৃত অসহায়ত্ব দেখা দেবে তখন।
অতীতে দেখা গেছে, এমন সময়ে সরকারি প্রশাসন এবং এনজিও তৎপরতা ছাড়া কাউকে পাশে পাওয়া যায় না। গতকাল পর্যন্ত ফেনী ও নোয়াখালীর বন্যা তথ্যকেন্দ্র প্রশাসনের এ ধরণের প্রস্তুতি সম্পর্কে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি।
অন্যদিকে এই বন্যার মাত্র এক মাস আগে এসব জেলায় আমন ধান লাগানো হয়েছিল। উপদ্রুত জেলাগুলোতে প্রায় শতভাগ আমন আবাদ বন্যার পানিতে ডুবে পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নেমে যাবার পরও হাতে সময় থাকবে নতুন করে নাবি-আমন চাষের। ধানের নতুন চারা তুলে দিতে হবে এসব এলাকার কৃষকের হাতে। এরজন্য নতুন বীজতলা করে এখনই বিপুল পরিমাণ চারা তৈরির কাজ হাতে নেয়া প্রয়োজন। এরজন্য নতুন করে বীজধান সংগ্রহ, বীজতলার জন্য পর্যাপ্ত খালি জমি খুঁজে বের করা, পর্যাপ্ত সারের মজুদ গড়ে তোলার এখনই সময়। অথচ বন্যামুক্ত এলাকায় কৃষি বিভাগ এ জাতীয় চারা তৈরির কোনো কাজ শুরু করেছে কিনা খোঁজ নিতে গিয়ে হতাশ হতে হয়েছে।