বিশ্ব ইতিহাসের দিকে নজর দিলে দেখা যায়,বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে ছাত্র আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে অধিকার আদায়ে মাঠে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। ইতিহাসে প্রথম ছাত্র আন্দোলন হয় চিনে, ১৬০ খ্রিস্টাব্দে। ইমপেরিয়াল বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তখন সরকারের কয়েকটি নীতির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন। তাদের আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন কিছু মেধাবী ছাত্রনেতা, যারা তুলনামূলক ভাবে গরিব পরিবার থেকে এসেছিলেন। তাদের এই আন্দোলন সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সেই আন্দোলনে অংশ নেয় এবং তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে।তবে,সরকার এই আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করে এবং ১৭২ জন শিক্ষার্থীকে কারাগারে নিক্ষেপ করে, যেখানে তাদের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ফরাসি বিপ্লব ও বোহেমিয়ান বিদ্রোহ ফরাসি বিপ্লবের সময়, ছাত্ররাও বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ফ্রান্সের শিক্ষার্থীরা রাজা ও সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। তারা নতুন এবং গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। ১৮৪৮ সালের বোহেমিয়ান বিদ্রোহের সময়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ছাত্ররা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অংশ নেয়। তারা তাদের নিজ নিজ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াই করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলনের এক অন্যতম দৃষ্টান্ত হলো ভাষা আন্দোলন। ১৯৫২ সালে, ঢাকার ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনে নামে। ২১ ফেব্রুয়ারি, ছাত্রদের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পরিণামে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনার উলওর্থ লাঞ্চ কাউন্টারে সাদা-কালো ভেদাভেদের প্রতিবাদে চারজন কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্র অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। তাদের আন্দোলনের সাথে শীঘ্রই আরও তিনশ শিক্ষার্থী যোগ দেন এবং এই আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
এই আন্দোলনের ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লাঞ্চ কাউন্টার গুলোতে বর্ণবৈষম্য রহিত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৪ সালে নাগরিক অধিকার আইন পাস হয়, যা মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের একটি মাইলফলক ছিল। ১৯৬৯ সালে, বাংলাদেশের ছাত্ররা পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান গড়ে তোলে। এই আন্দোলনে ছাত্ররা মুখ্য ভূমিকা পালন করে এবং এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়,ছাত্ররা মুক্তিবাহিনীর সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াইয়ে অংশ নেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার সোয়েতোর পাবলিক স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা বর্ণবৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৭৬ সালের ১৬ জুন, জোহানেসবার্গে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশ নেন। তবে, পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায় এবং এতে অনেক শিক্ষার্থী নিহত ও আহত হন। এই আন্দোলন ১৯৯৪ পর্যন্ত চলেছিল এবং শেষ পর্যন্ত দেশটির বর্ণবিদ্বেষী শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটায়। নেলসন ম্যান্ডেলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অনেকের আত্মত্যাগের ফলস্বরূপ দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবিদ্বেষী শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটে। ২০১৮ সালে, বাংলাদেশের ছাত্ররা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামে। এই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত সরকার কোটা ব্যবস্থা সংস্কারে বাধ্য হয়। বাংলার ইতিহাস যেমন সুদীর্ঘ, তেমনি বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসও অনেক লম্বা; যার কোথাও রক্তস্নাত স্মৃতি, আবার কোথাও বিজয়গাথা। ইতিহাস বলে, ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সেনাবাহিনী তৎকালীন মগধের নন্দ সাম্রাজ্যের সীমানার দিকে অগ্রসর হয় এবং ক্লান্ত সেনাবাহিনী তখন গঙ্গা নদীর কাছাকাছি বাংলার বিশাল বাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলে, বাহিনী বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং শেষ পর্যন্ত আজেকজান্ডার দ্য গ্রেট ফিরে চলে যেতে বাধ্য হন।
এর দীর্ঘ সময় পরে ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়। আমরা ব্রিটিশদের শোষণের কবলে পতিত হই। ব্রিটিশদের কাছ থেকে মুক্ত হতে হয়েছে অনেক আন্দোলন সংগ্রাম। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হলো, ভারতবর্ষ ভেঙে দুই টুকরো হলো, যেখানে ভারত ও পাকিস্তানের উদ্ভব, পাকিস্তানের আবার দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। বাঙালি এবার পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের জাঁতাকলে পড়ে। বৈষম্য, শোষণ, নিপীড়ন, অত্যাচার, অবিচারে অতিষ্ঠ বাঙালি রক্ত দিয়ে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা রক্ষায়। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার প্রমুখের রক্তে রঞ্জিত হয় ঢাকার রাজপথ। সেই থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ, নির্যাতন আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম চলতেই থাকে। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আমানুল্লাহ মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান (আসাদ), পুলিশের গুলিতে শহীদ হলেন। আবার রক্তাক্ত হলো রাজপথ, শহীদ আসাদ এখনো বাঙালির মনে গেঁথে আছেন, উন্নত শিরে দাঁড়িয়ে আছে তার স্মৃতি স্মারক আসাদ গেট।১৯৭০-এর নির্বাচনে বাঙালির বিজয়ের পরও ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি পশ্চিমাদের। শেষ পর্যন্ত ১৯৭১-এ এক দফা স্বাধীনতার ডাক। ৩০ লাখ শহীদের রক্তগঙ্গা বইয়ে যে স্বাধীনতা এল তা তো তারুণ্যের অর্জন, বাঙালির হাজার বছরের প্রতীক্ষার পরিসমাপ্তি।হাজার বছর শোষিত বাঙালি নিজের মানচিত্র পেয়েছে, এবার বুক ফুলিয়ে বিশ্বসভায় যাবে, পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে এই তো স্বপ্ন, আশা। সম্প্রতি ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থান। সেই অভ্যুত্থানে সরকারের নির্দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিভে যায় শত শত প্রাণ। এর বিনিময়ে অবিস্মরণীয় এক জয়ের দেখা পেয়েছে ছাত্র-জনতা। জনবিক্ষোভ দমাতে নির্বিচারে গুলি চালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি শেখ হাসিনার।
অবশেষে যবনিকা ঘটল সাড়ে ১৫ বছরের একচ্ছত্র শাসনের। ৫ ই আগস্ট সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে তিনি ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে উড়াল দেন। এর আগেই দেশজুড়ে কোটি মানুষ পথে নেমে বিজয় উল্লাসে মাতেন; নেন গণভবনের দখল। আবু সাঈদের আত্মত্যাগের পথ ধরে শিক্ষার্থী, শ্রমিক, মজুরসহ শত শত মানুষ গত ২১ দিনে শাসকের বন্দুকের নলের সামনে বুকে পেতে দাঁড়ানোর নজিরবিহীন সাহস দেখান। বিরলতম এ আত্মত্যাগে বিজয়ী হয়েছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান।উল্লাসে মাতোয়ারা সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, জনজোয়ারে ভেসে গেছে ক্ষমতার দম্ভ। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন গত ৫ জুন হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করলে অসন্তোষের শুরু হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গত ১ জুলাই থেকে শুরু হয় আন্দোলন। তৎকালীন সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের ঘোষণা দিলেও কৌশলে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফেরত আনার চেষ্টা করছে অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা সরব হন। গত ১৪ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যা দেন বলে দাবি করা হয়।এতে ওই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্লোগান ওঠে, ‘তুমি কে, আমি কে-রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে, কে বলেছে-স্বৈরাচার স্বৈরাচার’। এ স্লোগানের জবাব দিতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত-পরের দিন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ কথা বলার এক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর তাণ্ডব চালানো হয়। ছাত্রলীগের বহিরাগত নেতাকর্মী ছাত্রীদের মেরে রক্তাক্ত করে। এতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। গত ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বুক পেতে দাঁড়ালে, নিরস্ত্র এ তরুণকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করে পুলিশ।
আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। ১৮ থেকে ২১ জুলাই নারকীয় বর্বরতা চলে বিক্ষোভকারীর ওপর।সংবাদ মাধ্যমের হিসাবে এ চার দিনে ২১২ জনকে হত্যা করা হয়, যাদের অন্তত ১৯১ জন ছিলেন গুলিবিদ্ধ। প্রাণ হারান আবু সাঈদের পথে অনুপ্রাণিত অন্তত ৫০ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পথে নামা শত সাধারণ মানুষ নিহত হন। হাজার হাজার মানুষ গুলিবিদ্ধ হন। শতাধিক প্রাণ ঝরলেও ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে লাখো ছাত্র-জনতা রাজধানীর প্রবেশপথে অবস্থা নেন। শেষ সময়েও বিক্ষোভ দমনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে শেখ হাসিনা সরকার।কিন্ত তার এসব হুমকি যখন ছাত্রদের কাছে পরাজিত হয়, তখন অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়, প্রধানমন্ত্রী পদে শেখ হাসিনা আর থাকতে পারছেন না। দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার গণভবন থেকে ভারতের আগরতলার উদ্দেশে যাত্রা করে। ঠিক একই সময় তাঁর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় এবং ব্যক্তিগত বাসভবন সুধা সদন থেকে পুলিশ, বিজিবি সদস্যরা সরে যায়। তখন আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে কয়েকজন নেতাকর্মী, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দৌড়ে বের হতে দেখা যায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ধানমন্ডি এলাকায় সড়কে উল্লাসকারীর জনস্রোত নামে। আওয়ামী লীগ সভাপতির পদত্যাগের ঘোষণার পর সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। তাঁর হেলিকপ্টার গণভবন থেকে উড়াল দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে সেখানে হাজারো মানুষের ঢল নামে। শত সহস্র বাধা পেরিয়ে যে বাঙালি দেশ পেয়েছে, নিজের পরিচয় পেয়েছে তার মননে মগজে মাথা উঁচু করে কথা বলার প্রত্যয় থেকেই যায়। তাই প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়ে শিক্ষার্থী যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করে তখন সে আর ছোট্টটি থাকে না।যে কিনা স্কুল-কলেজে শিক্ষকের মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে সাহস করে না সে-ই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাজনীতি কিংবা শ্রেণীকক্ষের বিষয়ভিত্তিক পাঠ নিয়ে শিক্ষকের সঙ্গে বাহাসে যোগ দেয়, নিজের ধারণা-মতামত তুলে ধরে এবং সৃষ্টিশীল শিক্ষক এটিকে উপভোগ করেন, মনে মনে আনন্দ অনুভব করেন।
আমার নিজের ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে শিক্ষকতা জীবনে এমন অভিজ্ঞতা অনেক। বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীটি আর কিশোর নয়, পুরোদস্তুর তরুণ। সেটি সমাজ বা রাষ্ট্র বুঝুক আর না বুঝুক। এ তরুণ স্বপ্ন দেখে, ভবিষ্যতের জাল বোনে, তার ভবিষ্যতে কী থাকবে তা নির্ভর করে তার বর্তমান অবস্থার ওপর। বাঙালির মাঝে মানুষ বাস করলে হয়তো বাস্তবতা বুঝে ঘটনার শুরুতে এর সমাধান খুঁজত। পানি ঘোলা করে সমাধান খোঁজা যেমন বোকামি, তেমনি রক্তের বন্যার মাঝে, লাশের স্তূপে বসে কি সন্ধি হয়? এর মাঝে বাঙালির স্বভাব ঘর পোড়ার মাঝে আলু পোড়া তো হয়েই গেল। আহা বাঙালি! এত যে প্রাণ গেল ছোট্ট শিশু, টগবগে তরুণ যার মাঝে ছিল ছাত্র, খেটে খাওয়া মানুষ তাদের কি আর ফিরে পাওয়া যাবে? পানি লাগবে পানি বলে হাস্যময় মুগ্ধর কণ্ঠ কিংবা ‘ঘরে আমার বোন আছে’ বলে মিনতি করা কিশোরের আর্তি, বারান্দায় খেলতে যাওয়া ছোট্ট মেয়েটির চোখ এফোঁড়-ওফোঁড় করে যাওয়া রক্ত মাখা বুলেট কি তোমাকে ব্যথিত করে না? সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী তাদের কি মনে কোনো প্রশ্ন আসে না? কেন এমন হয়? কেন এমন হলো? এমন প্রশ্ন করার অনুভূতি, সাহস, বিবেক থাকলে নীতি নির্ধারকদের সামনে সঠিক কথাটি বলে পরামর্শ দিলে হয়তো আমাদের সন্তান, ভাই-বোনদের রক্তে রঞ্জিত হতো না রক্তাক্ত জুলাই। এত লাশ বাঙালি কীভাবে বইবে! ছাত্র আন্দোলন সব সময়ই সমাজ পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বিশ্ব ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ে ছাত্ররা তাদের অধিকার ও ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছে। তাদের সংগ্রাম এবং ত্যাগের মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে এবং এর প্রভাব আজও বিদ্যমান।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক