জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক তাপস কুমার দাস ও সুপ্রভাত পালের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীদের হেনস্থা, তাদেরকে দুষ্কৃতিকারী হিসেবে আাখ্যা দেওয়া, শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলা, ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন, পরিকল্পিতভাবে রেজাল্ট কমিয়ে দেয়াসহ ৯ দফা দাবিতে দুই শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
আজ রবিবার (১১ আগস্ট) সকাল ৯ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টারজান পয়েন্ট জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে ডিপার্টমেন্টে গিয়ে অনিদ্রিষ্টকালের জন্য ডিপার্টমেন্ট বন্ধ ঘোষনা করে তালা মেরে দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে একটি মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার চত্বরে যান বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। শহীদ মিনারের পাদদেশে মানববন্ধন করেন তারা৷
এসময় মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা আইন অনুষদের ডিন ও বিভাগের সভাপতি তাপস কুমার দাস ও সহযোগী অধ্যাপক সুপ্রভাত পালের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এনে তাদেরকে চাকরি থেকে অব্যহতির দাবি জানান।
মানববন্ধনে ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আলী হাসান মূর্তজা বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় আমি অন্দোলনে অংশ নেই। ২২ তারিখ পুলিশ গেরুয়াতে আক্রমণ করলে পুলিশের গুলির মুখে আমরা আত্মসমর্পণ করি। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আইনি সুপারিশের সেল গঠন করা হয়। আইন অনুষদের ডিন ও বিভাগের চেয়ারম্যান তাপস কুমার সেই সেলের সদস্য। তাপস স্যারকে জানানো হলে তিনি বলেন, আমি নাকি হিজবুততাহরীরের লোক, আমি নাকি দুষ্কৃতিকারী। যেখানে অন্য বিভাগের শিক্ষকরা আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে নিচ্ছেন সেখানে আমার ডিপার্টমেন্টর স্যার এসব বলেন!
৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আরশাদুল ইসলাম বলেন, আমার ডিপার্টমেন্টের ভাই-বন্ধুদের পুলিশ ধরে নিচ্ছে। আর ডিন হিসেবে তার কাছে সহযোগিতা চাওয়া হলে তিনি বলেন, হল বন্ধ, ভার্সিটি বন্ধ তাহলে তোমরা ক্যাম্পাসে কী কর? এব বলে চার্জ করতেছিলেন। আমাদের অনেকেই আশোপাশের এলাকাগুলোতে ভাড়া থাকতাম। তিনি কি এসব বলে শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করতে পারেন?
আরশাদুল আরও বলেন, রাহী আটক হওয়ার পর এক সিনিয়র ভাই তাপস স্যারকে আটক শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে আনার জন্য বললে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। তিনি ওই ভাইকে বলেন, তোমার বাড়ি কোথায়? আটক হওয়া ছাত্রেট বাড়ি কোথায়? তুমি তাকে কিভাবে চিনো? সে যে শিবির না, নৈরাজ্যকারী না তুমি তা কিভাবে জানো? আরেক শিক্ষার্থী সৃজন পুলিশের গুলিতে আহত হলে তার বাবা কল দিয়ে সহযোগিতা চাইলে তিনি সৃজনের বাবার সাথেও বাজে আচরণ করেন। বলেন, আপনার ছেলের কতবড় সাহস সে ছাত্রলীগের বিপক্ষে কথা বলেন। এটা একজন টিচারের আচরণের মধ্যেই পড়ে না। আমরা তার পদত্যাগ চাই!
সহযোগী অধ্যাপক সুপ্রভাত পাল শিক্ষার্থীর গায়ে তোলে অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সুহার্ত্য দৌলা অনিক বলেন, গত ২৭ জুন আমার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। আমি তাড়াহুড়ো করে ক্লাসে আসি এবং দ্বিতীয় সারির একটি বেঞ্চে বসে পরীক্ষা শুরু করি। তাড়াহুড়োয় আমার ফোনটা রাখতে মনে ছিলো না। পরীক্ষার একদম শেষ পর্যায়ে আমার ফোনটা বেজে উঠলে তিনি বলেন, আমি নকল করছি। আমি নকল করিনি বললে তিনি আমাকে সবার সামনে থাপ্পর মারেন। আমার ফোন নেয়ার দেড় মাস পার হলেও এখনো তিনি ফোন ফেরত দেননি।
এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লামিয়া আক্তার বলেন, অনিক সেকেন্ড বেঞ্চে ছিল। স্যারদের সামনে থেকে নকল করা সম্ভব ছিল না। তারপরেও তিনি ওর গায়ে হাত তোলেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি এটা করতে পারেন না।
বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে ফলাফল কমিয়ে দেয়ার অভিযোগ এনে জামিয়াতুন নাহু বলেন, শিক্ষকরা খাতা মূল্যায়নের সময় পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে থাকেন। যেসকল শিক্ষার্থী তেলবাজির মাধ্যমে তাদের মন জুগিয়ে তোলেন তারা সুনজরে থাকেন। এর প্রভাব তার রেজাল্টে দেখতে পাই।
একই অভিযোগ তুলেন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাশরুর রহমান। মাশরুর বলেন, যেসকল অভিযোগ শিক্ষার্থীরা তুলেছে তা খুবই পুরনো। কিন্তু এতোদিন আমরা বলতে পারিনি। ছাত্রলীগ দিয়ে, সাবেক সরকারের অঙ্গসংগঠন দিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখা হয়েছিল। কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিলেক্টেড কিছু প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য অনার্স ও মাস্টার্সের শেষের দিকে আমাদের সিজিপিএ কমিয়ে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, সুপ্রভাত পাল তাপস কুমারের বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়র। অনেক যোগ্যপ্রার্থী থাকার পরেও তাপস কুমার তাকে নিয়োগ দেন। তারপর সুপ্রভাত পালের বর্তমান স্ত্রী এবং তৎকালীন গার্লফ্রেন্ড বনশ্রী রাণীকে নিয়োগ দেয়া হয়। বনশ্রী রাণীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাতিল হওয়া এক নিয়োগে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
মাদ্রাসা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের প্রতি বিরূপ আচরণ করা হয় অভিযোগ এনে কাওসার আহমেদ রেজাউল বলেন, আমরা যারা মাদ্রাসা থেকে এসেছি ক্লাসে নানানভাবে তাদের হেনস্থা করেছে। তারা ক্লাসে কোন প্রশ্ন করলে তাদের প্রশ্নের উত্তর তো দেয়াই হতো না বরং উল্টো প্রশ্ন করে বলা হয় তুমিতো কি মাদ্রাসা থেকে এসেছো? দাঁড়ি-টুপি পরে আছো! মাদ্রাসা ছাত্র হলে কি আমার প্রশ্ন করার অধিকার নেই?
এছাড়া ও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা তাপস কুমার দাস ও সুপ্রভাত পালের নানা অন্যায়, অবিচার ও অনিয়ম নিয়ে কথা বলেন শিক্ষার্থীরা।