দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও ভর্তির আবেদন কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই পরিস্থিতিতেই গতকাল বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির আনুষ্ঠানিক ক্লাস শুরু করে দেওয়া হয়েছে। এদিন রাজধানীসহ সারা দেশে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া নতুন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিয়েছে কলেজগুলো। কলেজ অধ্যক্ষরা জানিয়েছেন, শতকরা হিসেবে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার ছিল ৬০ থেকে ৭০ ভাগ। তবে, ঢাকা কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি কলেজে একাদশে ক্লাস শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এর আগে দেশের সব কলেজে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরুর নির্দেশনা দিয়ে গত বুধবার চিঠি পাঠায় ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এ ছাড়া যেসব শিক্ষার্থীরা কলেজে এখন পর্যন্ত ভর্তি হতে পারেননি তাদের চতুর্থ ধাপে ভর্তির আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু শর্ত শিথিলও করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্দেশনার পর কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগ কলেজে গতকাল নবীন বরণের মধ্য দিয়ে ক্লাসের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল বেশ ভালো। তবে, ক্লাস শুরু হয়নি রাজধানীর অন্যতম নামী ঢাকা কলেজ। কোটা আন্দোলনে প্রথম সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছে এ কলেজের শিক্ষার্থীরা। কলেজটিতে এখনও থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। ঢাকা কলেজের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন সিনিয়র অধ্যাপক জানিয়েছেন, বোর্ডের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও গতকাল তারা ক্লাস নিতে পারেননি। সেখানকার পরিস্থিতি এখনও থমথমে অবস্থা। ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা প্রথম দিন ক্লাস করতে কলেজে আসেননি। নাম না প্রকাশের শর্তে একজন শিক্ষক জানিয়েছেন, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয় তালা দিয়ে রেখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অসহযোগিতা করায় তারা অধ্যক্ষের রুম সিলগালা করে দেন।
এদিন ক্লাস শুরু হয়নি রাজধানীর বাংলা কলেজেও। এদিন নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা না আসায় ক্লাস শুরু করা যায়নি। একই সঙ্গে কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে রেখেছেন আন্দোলনরতরা।
নবীন বরণের মধ্যে দিয়ে ক্লাস শুরু হয়েছে রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজেও। এদিন সবগুলো সেকশন মিলে প্রায় ৬০ শতাংশের মতো শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশ নিয়েছে। তবে বাকি শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের। আতঙ্কে তারা এখনও ঢাকা ফিরেননি। কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনির হোসেন জানিয়েছেন, অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের অনেকেই মফস্বল থেকে আসা। তারা এখনও গ্রাম থেকে ফিরেননি।
ক্লাস শুরু হয়েছে রাজধানীর সবুজবাগ সরকারি কলেজেও। এ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শামীম আরা বেগম জানিয়েছেন, ক্লাস শুরুর প্রথম দিন প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী নবীনবরণে অংশ নিয়েছে। সব বিভাগ মিলে এবার মোট ৬৫০ জন শিক্ষার্থী একাদশে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৫০-৬০ জনের মতো নতুন দিন ক্লাসে আসেননি। এদের অনেকেই দেশের বিভিন্ন মফস্বল এলাকা থেকে উঠে আসা। এর আগে গত বুধবার ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু করতে নির্দেশনা দেয় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। এদিকে প্রথম থেকে তৃতীয় ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় গত বুধবার শেষ হয়েছে। তবে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির চতুর্থ ধাপের আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের। তিন ধাপে আবেদন গ্রহণ ও শিক্ষার্থী নির্বাচনের পরও কিছু কলেজ মাদ্রাসায় সিট খালি থাকায় ও কিছু শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নির্বাচিত হতে না পারায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, ১১ থেকে ১৪ আগস্ট (বুধবার) রাত ১০টা পর্যন্ত চতুর্থ বা সর্বশেষ ধাপের আবেদন গ্রহণ করা হবে। ১৭ আগস্ট (শনিবার) রাত ৮টায় চতুর্থ ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে। ১৮ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট (সোমবার) রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সিলেকশন নিশ্চায়ন করতে হবে। চতুর্থ ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা ২০ আগস্ট (মঙ্গলবার) কলেজে ভর্তি হতে পারবেন।
ঢাকা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো. রিজাউল হক গতকাল ভোরের ডাককে জানিয়েছেন, তাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে, তাতে বেশির ভাগ কলেজেই ক্লাস শুরু হয়েছে। অর্থ্যাৎ নবীনবরণ কার্যক্রম শুরুর মধ্যে দিয়ে এ পাঠ শুরু করা হয়েছে। তবে, এখনও কিছু কিছু কলেজে ক্লাস শুরুর তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। আমরা আশা করছি দ্রুত সেসব কলেজে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে এবং ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, যেসব শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তির আবেদন করেননি বা আবেদন করে কলেজ সিলেকশন পাননি তারা এবং যেসব শিক্ষার্থী চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েও কলেজে ভর্তি হতে পারেননি তারাও চতুর্থ ধাপে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ শিক্ষার্থীকে আগামী ১১ আগস্ট কার্যক্রম শুরুর প্রথমেই আগের নিশ্চয়ন বাতিল করতে হবে এবং নতুন করে কলেজ পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করতে হবে বলে জানান তিনি।