বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে মানুষের মনে স্মরণীয় করে রাখতে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি এঁকেছেন শিক্ষার্থীরা। এসব ছবিতে ফুটে উঠছে আন্দোলনে যুক্ত থাকা শিক্ষার্থীদের রক্তে রঞ্জিত ইতিহাস। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর শিল্পকলা একাডেমি, জিইসি মোড়, ২ নম্বর গেট, জামালখানসহ বিভিন্ন এলাকায় দেয়াল ও ফ্লাইওভারে সড়কের পিলারে গ্রাফিতি দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘আমাদের দেশের ভাগ্য আমরাই পরিবর্তন করবো’, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’, ‘এ শহর আর কাঁদবে না, অন্যায় আর থাকবে না’ এমন স্লোগানে নানান শিল্পকর্মে রেঙে উঠছে চট্টগ্রাম নগর। শিক্ষার্থীদের রঙ তুলির আঁচড়ে করা ক্যালিওগ্রাফি-গ্রাফিতিতে চোখ আটকে যাচ্ছে শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ সবার। কাঠফাটা রোদে এক হাতে রংয়ের কৌটো, অন্যহাতে তুলি। মাথা বেয়ে বেয়ে চুয়ে পড়ছে ঘাম। তবুও চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস শিক্ষার্থীদের।
এর আগে গত বুধবার সকাল থেকেই এ পরিস্থিতি শুরু হয়। সকাল থেকে দেখা যায়, জিইসি মোড় এলাকার বিভিন্ন দেওয়ালে এসব ক্যালিওগ্রাফি করতে নানা প্রান্ত থেকে হাজির হন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলপড়ুয়া তরুণ শিক্ষার্থীরা। অথচ, কিছুদিন আগেই জিইসি মোড়ের এসব দেওয়াল ছিল রাজনৈতিক বিভিন্ন অশোভনীয় স্লোগান, বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপনে শ্রীহীন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অপরিচ্ছন্ন প্রতিটি দেওয়াল কালো, সাদা, লাল, নিল, হলুদসহ নানা রঙে জল তুলির আঁচড়ে রাঙাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের কারও হাতে ছিল রঙ-তুলি, আবার কেউ কেউ একে অপরকে পান করাচ্ছেন পানি। অনেকেই আবার দেখিয়ে দিচ্ছেন কোথায় কি রঙ, কোন ক্যালিওগ্রাফি করবেন। সবার চোখেমুখেই যেন ছিল বিজয়ের হাসি।
দেওয়ালগুলোয় চোখ বুলিয়ে দেখা যায়, কোথাও শিক্ষার্থীরা লিখেছেন দেশাত্মবোধক গানের অংশবিশেষ, কোথাও নাগরিক কবি শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’, কোথাও বিদ্রোহী কবির সেই আগুনঝড়া কবিতার ‘বল বীর, বল বীর, বল উন্নত মম শির’।
শুধু তাই নয়, তাদের দেওয়াল লিখনীতে ঠাঁই পেয়েছিলো, রাজধানীতে আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের পানি বিলিয়ে চলা বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র মায়াবী মুগ্ধের সেই ডাক, ‘পানি লাগবে, পানি?’। সেইদিন অর্থাৎ গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরা আজমপুর এলাকায় মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ যখন পানির কেস হাতে নিয়ে ক্লান্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে পানি বিতরণ করছিলেন, তখন আন্দোলনকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি চালালে একটি গুলি মুগ্ধর কপালে লাগে। মুহুর্তেই সেই বুলেটে নিঃশেষ হয় তাঁর জীবন।
তাঁদের কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে প্রশ্ন শেষ করার আগেই উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে উঠলেন, ‘দেশটা আমাদের সবার ভাই। দেশ যেহেতু আমরা স্বাধীন করেছি সেহেতু এ দেশের প্রতিটি স্থাপনা রক্ষা ও এসবের সৌন্দর্য রক্ষার দায়িত্বও আমাদের। এখন থেকে আগের সবকিছু ভুলে আমাদের নয়া উন্মাদনায় দেশ গড়তে হবে। দেশের হয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে।