ই-পেপার বাংলা কনভার্টার শনিবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ৬ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার শনিবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




ক্ষমতা কারো জন্য চিরস্থায়ী নয়
মোঃ জামাল তালুকদার
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০২৪, ১:৪৫ পিএম আপডেট: ০৮.০৮.২০২৪ ১:৫৩ পিএম  (ভিজিটর : ৫১৪)
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ছাত্ররা কখনোই বিজয় ছাড়া ঘরে ফিরেনি। সত্যের পতাকা বহন করে এগিয়েছে দুর্বার গতিতে। প্রয়োজনে বিলিয়ে দিয়েছে বুকের তাজা রক্ত। পিছনে তাকানোর ইতিহাস তরুণদের নেই। এই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনটিতে পিতা-মাতার অশ্রæসজল ভালোবাসা এবং স্বতস্পূর্ত অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীদের করেছে আরো বেগবান। সবশ্রেণি পেশার মানুষ নেমে এসেছে রাস্তায়। অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে। পত্রিকাগুলোর সূত্রে আমরা দেখেছি গত ১ জুলাই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাবেশ ও বিক্ষোভ শুরু হয়। পরদিন শাহবাগে ১ ঘন্টা অবরোধ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা আরিচা সড়ক অবরোধ। পর্যায়ক্রমে শাহবাগ মোড়ে দেড় ঘন্টা অবরোধ ধারাবাহিকতায় আরো ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও অবরোধ।

 মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র, অবৈধ ঘোষণার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ স্থগিত করেননি। চলছে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতারভাবে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। বাংলা ব্লকেডে স্থবির রাজধানী। অনির্দিষ্ট কালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ সমূহে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা। ঢাকার ১১টি স্থানে অবরোধ। ৯টি  বিশ^বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, ৩ স্থানে রেলপথ অবরোধ এবং ৬টি মহাসড়ক অবরোধ। একের পর এক কর্মনূচির অংশ হিসেবে সারাদেশে সকাল সন্ধ্যা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা। 

১০ জুলাই কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে চার সপ্তাহের জন স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ আপিল বিভাগের কিন্তু  থেমে যায়নি ছাত্র সমাজ।  পুলিশের বাধার মুখেই দেশের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ , বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ। রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচী ঘোষণা এবং রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদান পাশাপাশি ২৪ ঘন্টার সময়সীমা বেঁেধ দেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কবৃন্দ। মধ্যরাতেও ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ। শিক্ষার্থীদের বিস্ফোরণ ঠেকাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের উপর হামলা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানেও হামলা হয়। 

১৬ জুলাই সারা দেশে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ। রংপুরে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন আবু সাঈদ।  এই আন্দোলনকে আর দমিয়ে রাখা যায়নি।  মারাত্মক আকার ধারণ করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অবস্থা অনুকুলে না থাকায় সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ। তুমুল বাঁধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, গায়েবানা জানাযা, কফিন মিছিল ইত্যাদি। মূলত বিশাল আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। দেশব্যাপী সংঘর্ষ ও গুলি। নিহত ২৭ জন। সরকারের আলোচনার প্রস্তাব-আন্দোলনকারীদের প্রত্যাখ্যান।  এরপর কোটা সংস্কার দাবীতে কমপ্লিট শাটডাউন। এরই প্রেক্ষিতে দেশ জুড়ে কারফিউ, সেনা মোতায়েন, সাধারণ ছুটি ঘোষণা। 

 রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ধাওয়া ও গুলি।  সরকারী চাকুরীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আদালতের রায় মেধা ভিত্তিক ৯৩% , মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫% এবং ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ১% এবং প্রতিবন্ধি ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১% নির্ধারণ করা হয়। কোটা প্রথা সংস্কার করে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন অনুমোদন এবং কোটা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি ও সীমিত আকারে ব্রডব্যান্ড চালু করা হয়। পর্যায়ক্রমে আন্দোলন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ২১ জুলাই রবিবার পর্যন্ত ১৯৩জন শহীদ হয়েছেন। আর বসে থাকা নয় শিক্ষার্থীদের সাথে অভিভাবক, চাকুরীজীবি, আইনজীবি, সাংবাদিক, কবি-সাহিত্যিক সহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ নেমে এসেছে রাস্তায়।  ছাত্রদের বুকে গুলি মেনে নিতে পারছেন না তারা। এখানে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বটে কিন্তু দেরী করে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে কোটা সংস্কারেরর অনুমোদন  এবং প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে কিন্তু সময়ের মূল্য না বুঝায় পরিস্থিতি সামাল দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দমন,পিড়ন, গুলি- মোট কথা পেশি শক্তির প্রয়োগের ফলে জনমনে আগুনের লেলিহান শিখা জ¦লে উঠেছে। ছাত্র-জনতা একই প্লাটফর্মে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। চোখের সামনে কেউ কেউ গুলিতে চলে গেছে না ফেরার দেশে। তবুও থেমে যায়নি তারা। অদম্য সাহসে সম্মুখ পানে এগিয়েছে। ৪ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্তক অসহযোগ কর্মসূচীর প্রথমদিনে সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যপক সংঘাতে ১১৪জনের প্রাণহানি ঘটে। ৫ আগষ্ট অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য সহ সর্বস্থরের মানুষ এক দফার দাবিতে নেমে এসেছেন রাস্তায়। 

দমন, পিড়ন, গুলি কোনভাবেই যখন এই জন-জোয়ারকে ফিরানো যাচ্ছে না তখন নিরুপায় হয়ে পালিয়েছেন বিশ্বের ১০০ জন ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় ৪২তম কেতাব প্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  দীর্ঘ সময় থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার দমন-পীড়ন-মামলা-হামলার ফলে যে ক্ষোভ জমে ছিলো তা বিস্ফোরিত হলো ৫ আগস্ট। এখান থেকে আমাদের শিখতে হবে এবং কুক্ষিগত নয় আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানের জন্য জনবান্ধব হয়ে কাজ করতে হবে। চিরন্তন সত্য বাণীটি মানতেই হবে “ক্ষমতা কারো জন্য চিরস্থায়ী নয়।” লক্ষ্য  করেছি বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেছে ছাত্র-শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে এই ছাত্র জনতার বিজয় যেন কলঙ্কিত না হয়। বিজয় উল্লাসের সুযোগ হাতে নিয়ে কোন কুচক্রিমহল যেন ভাংচুর, লুটপাট সহ অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরী করতে না পারে। লুটপাট, ভাংচুর, দূর্বৃত্তায়ন কখনোই কাম্য নয়। সুযোগে প্রতিপক্ষের উপর হামলা এটা বীর পুরুষের কাজ নয়। এটাই কাপুরুষতা । 

পাশাপাশি সংখ্যা লঘুদের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। ইসলামে সংখ্যা লঘুদের অধিকার বিষয়ে বলা হয়েছে যে, তারা মুসলমানদের মতই সামাজিক অধিকার ভোগ করবে। সমাজে তাদের বৈষম্য দেখানোর কোন সুযোগ নেই। সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংখ্যালঘুদের পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে ইসলাম বদ্ধ পরিকর। সুতরাং যেহেতু ইসলাম সংখ্যালঘুদের বেলায় যত্মশীল সেখানে যারা এই গর্হিত কাজ করবে তারা কখনই ইসলাম প্রিয় মানুষ হতে পারে না। দুর্বৃত্তায়ন কখনোই মঙ্গলকর নয়। শহীদদের রক্ত এবং অকুতভয় বীর শিক্ষার্থীদের জন্যই আজ নতুন করে স্বপ্ন দেখছি আমরা। সুতরায়ং এই আনন্দকে কলংকিত করার অধিকার কারোর নেই। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পেশাগত দায়িত্ব পালনে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ছাত্ররা সেনাবাহিনীকে ফুল দিয়ে বরণ করছে। পাশাপাশি যারা নৈতিকতা থেকে ছিটকে পড়েছে তাদের জন্য নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে। তেজদিপ্ত তারুণ্য একটি রাষ্ট্রকে বদলে দিতে পারে এটার জ¦লন্ত দৃষ্টান্ত আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। শিক্ষার্থীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকের সমর্থিত বা প্রস্তাবিত সরকার ছাড়া আর কোন ধরনের সরকারকে সমর্থন করবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিপ্লবী এই শিক্ষার্থীদের ত্যাগের বিনিময়েই কিন্তু একটা বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে এদেশের আপামর জনতা। গণমাধ্যমের সুবাধে আমরা দেখেছি শিক্ষার্থীরা সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনের কাজ করছে । রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও স্থাপনা পাহাড়া দিচ্ছে। তরুণদের এই ভালো কাজগুলোর হাত ধরেই এগিয়ে যাবে লাল সবুজের বাংলাদেশ। আসুন, একটা সুন্দর রাষ্ট্র বিনির্মানে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করি। ঐক্যের ফলেই কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আমাদেরকে একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখালো। চব্বিশ সালের এই মহাঅর্জন যেন আমরা কলংকিত না করি। এই হোক অঙ্গীকার। 

লেখক: জামাল তালুকদার
সাধারণ সম্পাদক,
দুর্গাপুর প্রেসক্লাব







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]