চট্টগ্রাম মহানগরীর থানা ভবনগুলো পুলিশশূন্য রয়েছে। তালা লাগানো রয়েছে অঙ্গার হয়ে যাওয়া থানার গেটে। বাইরে লাঠি হাতে ঘোরাঘুরি করছিলেন কয়েকজন যুবক। সরেজমিনে এসব চিত্র দেথা গেছে।
সদরঘাট থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার সামনে সড়কে পড়ে আছে আলামতের শত শত মোটরসাইকেলের স্তূপ। থানার ভেতরে এলোমেলোভাবে পড়ে আছে পুড়িয়ে দেয়া যানবাহন। বন্ধ রাখা হয়েছে থানার গেট।সদরঘাট থানার অদূরে রয়েছে নগর পুলিশের ডাম্পিং ইয়ার্ড। যেখানে নগরীর বিভিন্ন থানার আলামতের হাজারো মোটরসাইকেলসহ নানা যানবাহন ছিল। ইয়ার্ডের পাশের এক দোকানদার জানান, সোমবার বিকেলের দিকে একদল যুবক থানায় হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ সদস্যারা থানা থেকে প্রাণ নিয়ে কোনমতে বের হয়ে যান। পরে যুবকরা থানার সামনে থাকা গাড়িগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। থানায় আগুন দেয়ার পরপরই অদূরে থাকা ডাম্পিং ইয়ার্ড থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় শত শত মোটরসাইকেল। অনেকে নিয়ে গেছেন, আবার অনেকে কিছু মোটরসাইকেল সড়কে ফেলে গেছেন।
সরকার পতনের পরপরই গত সোমবার বিকেলে আগুন দেয়া হয় কোতোয়ালী থানায়। লুট করা হয় অস্ত্রাগারে থাকা অস্ত্র আর নানা সামগ্রী। পুলিশ সদস্যরা নিজেদের বাঁচাতে থানা থেকে বের হয়ে যান। এখন পুলিশশূন্য থানা ভবন। দেখলে মনে হবে পোড়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপ। আঙিনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দগ্ধ গাড়ির কঙ্কাল। পুড়ে যাওয়া দামি সাদা সাঁজোয়া যানটি পড়ে আছে থানার সামনেই। ভেতর থেকে তখনও উঠছিল ধোঁয়ার কুন্ডলী। এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুড়ে যাওয়া নথিপত্র। অস্ত্রাগারে নেই কোন অস্ত্র।
থানার ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, নিচতলার অভ্যর্থনা কক্ষ, ওসির কক্ষ, দ্বিতীয় তলার উপ-পরিদর্শকদের কক্ষ আর পুলিশ ব্যারাকে মেঝেতে ছড়িয়ে আছে পুলিশের পোশাক আর নানা অসবাবপত্র। পুড়ে অঙ্গার হয়ে আছে পুলিশ সদস্যদের ঘুমানোর লোহার খাটগুলো।
সদরঘাট আর কোতোয়ালীর মতো একই অবস্থা পতেঙ্গা থানায়। পুড়ে যাওয়া থানা ভবনটি চেনা যাচ্ছিল না। পতেঙ্গা থানার ওসি মাহফুজুর রহমান জানান, সরকার পতনের পরপরই দুপুর আড়াইটার দিকে হাজারো মানুষ থানায় হামলা করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ সদস্যরা প্রাণ বাঁচাতে থানা থেকে বের হয়ে যে যেদিকে পারে চলে যায়। থানায় আগুন দেয়ার আগে অস্ত্রাগার লুট করে তারা।
পাহাড়তলী থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানা ভবনের সামনে শত শত মানুষের ভিড়। ভেঙে ফেলা হয়েছে থানার পশ্চিম অংশের সীমানা দেয়াল। ভেতরে ১০-১৫ জন যুবক মেঝেতে পড়ে থাকা পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন আসবাবপত্র উল্টিয়ে দেখছিল। তারা থানার প্রতিটি কক্ষে ঘুরছিল নির্বিঘেœ। থানার সামনেই পড়ে আছে পুড়িয়ে দেয়া নানাধরনের যানবাহন। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে থানার সবকটি কক্ষ।
স্থানীয় এক দোকানদার জানান, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে লাঠি, লোহার রড আর কিরিচ হাতে একদল যুবক থানার গেট ভেঙে প্রবেশ করে। আর কিছু যুবক থানার পশ্চিম অংশে দেয়াল ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা থানার পেছনের গেট দিয়ে বের হয়ে যায়। থানার ভেতর থেকে যে যা পারে লুট করে। এর মধ্যে থানার সামনে থাকা গাড়ি ও ভেতরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। একই কায়দায় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে নগরীর ডবলমুরিং, ইপিজেড, আকবরশাহ ও হালিশহর থানা। প্রতিটি থানা থেকে যে যা পারে লুট করে নেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত সোমবার সরকার পতনের পরপরই একদল উশৃঙ্খল যুবক থানায় হামলা চালায়। এ সময় সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের ফোন করেও কোন সহযোগিতা পাইনি। সিনিয়র কর্মকর্তারা ফোন ধরেননি। অথচ আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ পালন করেছি মাত্র।
দুইটার সময় নগর পুলিশের সদর দপ্তর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে গিয়ে দেখা যায় মূল ফটক তালা দেয়া। বাইরের কোন লোককে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। তবে গেটে থাকা এক যুবক জানান, পুলিশ কমিশনার অফিসে কোন কর্মকর্তা আসেননি। একইভাবে বন্ধ ছিল নগরীর দুই নম্বর গেট জেলা পুলিশ সুপার অফিস, মনসুরাবাদ পুলিশ লাইন্স এবং বড়পুল জেলা পুলিশ লাইন্সও।