আন্দোলন সংগ্রামে বাংলাদেশ অচল হয়ে পড়েছিল। অনিবার্যভাবে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে। এ ব্যাপারে দৈনিক ভোরের ডাকে প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রেমিট্যান্সের নেতিবাচক প্রবাহ এবং মূল্যস্ফীতির বাড়তি চাপ সামনের দিনগুলোতে জনদুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলমান আন্দোলনর সমাপ্তির পর দ্রুত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেয়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সংঘাত-সহিংসতার প্রভাব ইতোমধ্যে অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেছে। সর্বশেষ গত ৪ আগস্ট থেকে আন্দোলনকারীরা অনির্দিষ্টকালের অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিলে ক্ষতির মুখে পড়ে পরিবহন সেক্টর, দোকান ব্যবসায়ী, গার্মেন্ট শিল্প আমদানি রপ্তানিকারকসহ সব ধরনের ব্যবসায়ীরা। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এটা নিশ্চিত যে মূল্যস্ফীতি আরেক দফা বাড়ছে। কোটা আন্দোলনে এ পর্যন্ত মারা গেছেন প্রায় চার শতাধিক মানুষ। যার মধ্যে জাতিসংঘের তথ্যমতে শিশু মারা গেছে ৩২ জন। অন্যদিকে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন অর্থাৎ ৪ আগস্ট ১৪ পুলিশসহ ১০৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে মিডিয়া। এত মৃত্যু এত ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি মেনে নেয়া যায় না।
বাংলাদেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামের লক্ষ্যবস্তু হয় অর্থনীতি। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে হরতাল অসহযোগের শুরু। সেই অসহযোগ আন্দোলনেও লক্ষ্যবস্তু ছিল তখনকার অর্থনীতি। বিলেতি পণ্য বর্জনের অসহযোগ আন্দোলন প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, বিলেতি পণ্য আমদানি এবং বিপনণের সাথে জড়িতদের কী হবে তারা কীভাবে জীবন ধারণ করবে! কিন্তু তারপরও অর্থনীতি টার্গেট করেই আন্দোলন হয়। পাকিস্তানি আমলে এমন কি বাংলাদেশ আমলেও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, খারেদা জিয়ার আমলে তত্ত্বাবধায়কের দাবিতেও আন্দোলনের সময়ও জ্বালাও পোড়াও হয়েছিল। এটা আমাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এখন তো প্রতিযোগিতার বিশ্ব। আমাদের পোশাক পণ্যের প্রতিযোগী দেশ হচ্ছে ভিয়েতনাম, ভারত পাকিস্তান। আমরা হেরে গেলে তার প্রভাব গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত পড়বে। দেশে বেকারত্বে হার বাড়বে। সংকট আরো ঘনীভূত হবে। সুতরাং এই প্রক্রিয়া বন্ধ হতে হবে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতারাও ধ্বংসাত্মক কার্যাবলী পরিহার করার কথা বলেছেন।
বাঙালি আন্দোলন সংগ্রামপ্রিয় জাতি। এ দেশে আন্দোলন সংগ্রাম হবেই। কিন্তু আন্দোলন যাতে অর্থনীতি-বিধ্বংসী না হয় তার জন্য আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে উপায় খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনে সবগুলো রাজনৈতিক দলের নেতারা এক জায়গায় বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আন্দোলন সংগ্রাম হবে কিন্তু অর্থনীতি টার্গেট হবে না। জাতীয় স্বার্থে সব দল এক জায়গায় বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নজির তো এ দেশে আছে। এটা হওয়া দরকার।