সহিংসতা ও নাশকতার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এই সময় যাত্রাবাড়ি, ধানমন্ডি, শাহবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর ও উত্তরা এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংর্ঘষে এক শিক্ষার্থী নিহত হন, গুলিবিদ্ধ হন অন্তত ২০ জন। এছাড়া উভয় পক্ষের অন্তত দুই শতাধিক নেতাকর্মী ও সাধারণ জনতা আহত হয়।
রোববার সকাল থেকে বিকাল পযর্ন্ত বিচ্ছিন্ন ভাবে রাজধানী জুড়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এই সংঘর্ষ চলে।
সকালে বাংলামোটর এলাকায় আওয়ামী লীগ ও দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। শাহবাগ ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেওয়ার পর কারওয়ান বাজার থেকে আওয়ামী লীগের একটি মিছিল সেদিকে যায়। তারপর বাংলামোটরে সংঘর্ষ শুরু হয়। রাজধানী উত্তরার আজমপুরে বিক্ষোভকারী, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দুপুর ১২টার দিকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়।
দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিব হাসান আজমপুরের একটি ক্যাম্পে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বিক্ষোভকারীরা ছিলেন সড়কে। পরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুরান ঢাকায় রায় সাহেব বাজার এলাকায় বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংষর্ঘ হয়। এ পর্যায়ে সরকার সমর্থিত নেতাকর্মীদের প্রতিরোধে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় বিক্ষোভকারীরা। যাওয়ার সময় তারা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে সরকার সমর্থিত নেতাকর্মীরা ভোরের ডাককে জানিয়েছেন। বাড্ডা রামপুরা ও কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায়ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষ হয়।
এদিকে রোববার সকালের দিকে ঢাকার নিজ নির্বাচনী এলাকা শ্যামপুরে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিদিনের মতো অবস্থান নেন ঢাকা-৪ আসনের এমপি ড. আওলাদ হোসেন। এই সময় তিনি তার কয়েক হাজার অনুসারীদের নিয়ে পোস্তগোলা থেকে দোলাইরপাড় পযর্ন্ত মিছিলও করে।
যাত্রাবাড়ী থানার সামনে স্থানীয় এমপি মশিউর রহমান মোল্লা সজলের অনুসারী আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। বেলা পৌনে একটার দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় বিক্ষোভকারী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে মিরপুর–১৪ নম্বরের সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন নিখিলকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সমাবেশ করতে দেখা গেছে। রোববার বেলা ১১টার আগে এ সমাবেশ দেখা গেছে। এ সময় তাঁদের অনেকের হাতে লাঠি দেখা যায়।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সতর্ক অবস্থান আ. লীগ নেতা-কর্মীদের: আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। রোববার সকাল থেকে তারা মিছিল নিয়ে কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। নেতা-কর্মীরা জানান, সকাল ৯টা থেকে মহানগর দক্ষিণের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে তারা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। তারা আশপাশের সড়কে দফায় দফায় মিছিল করছেন এবং স্লোগান দেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজারের দিক থেকে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দিকে আসার চেষ্টা করে। কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের ধাওয়া দেন। এ সময় কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হয় এবং রাস্তার লোকজন দৌড় শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়। দুপুরের দিকে নেতা-কর্মীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তারা দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কসহ পীর ইয়ামেনি মার্কেটের সামনের সড়কে তারা অবস্থান নিয়েছেন।
এদিকে বেলা ১১টার দিকে শাহবাগ এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল হাসপাতালের প্রাঙ্গণে থাকা প্রায় ২০টি গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স এবং ১৫টির মতো মোটরসাইকেলে ভাঙচুর করা হয়। কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। এর আগে সকালে শাহবাগ এলাকা দিয়ে দুইতিনজন করে বিক্ষোভকারী যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাঁদের মারধর করেন। পরে বিক্ষোভকারীরা সংগঠিত হয়ে আসলে প্রথম দফা সংর্ঘষ হয়।