চলমান ছাত্র বিক্ষোভে যুক্ত হয়েছে সরকার বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সমাজিক- সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন। এর পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার সাধারণ মানুষ। শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সাধারণ ছাত্রদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। একই দৃশ্য দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অনুষ্টিত ছাত্র বিক্ষোভে। এছাড়া শুক্রবার ও শনিবার চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট, কুমিল্লা, বরিশাল, খুলনা, বগুড়া, গাজিপুর, যশোর, সাতক্ষিরা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত ছাত্র আন্দোলনে সরকার বিরোধী হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিক দলের কর্মী ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার দলের নেতাকর্মীদের ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার জন্য সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছে। তার নির্দেশনার পরপরই শনিবার ঢাকা সহ সারাদেশে ছাত্র বিক্ষোভে বিএনপির নেতাকর্মীদের ব্যাপক সক্রিয় দেখা গেছে। এছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি-বাসদসহ বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরীক দল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে ছাত্র বিক্ষোভে।
এছাড়া সরকারী বিরোধী হিসেবে পরিচিত চিকিৎসক, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিল্পীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যরা দলে দলে যোগ দিচ্ছে চলমান ছাত্র অন্দোলনে। এই সব সংগঠনের নেতাকর্মীদের শুক্রবার ও শনিবারের কর্মসূচিতে ব্যাপক মাত্রায় উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা নিজ নিজ উদ্যোগ ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন।
গত কয়েকদিন ধরে নয় দফা দাবিতে আন্দোলন চললেও শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় রোববার থেকে এক দফা দাবিতে চলবে চলমান এই আন্দোলন। আর এই এক দফা দাবি হলো সরকারের পদত্যাগ। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এই এক দফা ঘোষণা করেন। এই দাবীতে রোববার সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলনে ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এই ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, ছাত্রদের যৌক্তিক এই আন্দোলনে আমাদের শুধু সমর্থন নয়, আমাদের সব রকমের সহমর্মিতা, সহযোগিতা তাদের সঙ্গে থাকবে। যেহেতু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, আমরা একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আমরা পালন করছি, করতে থাকবো।ফখরুল বলেন, দেশে আমাদের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আহ্বান জানাতে চাই, ছাত্রদের এই আন্দোলনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য।
এই ব্যাপারে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ভোরের ডাককে বলেছেন, কালবিলম্ব না করে শেখ হাসিনা সরকারকে পদত্যাগ করে দেশের মানুষের গণরায়কে মেনে নেয়া এবং সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন,হত্যা, নির্যাতনের প্রতিবাদে ও ছাত্রদের দাবি আদায়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার গণমিছিলে পুলিশ-দলীয় সন্ত্রাসীদের হামলা, হত্যা নির্যাতন করে গদি রক্ষা করা যাবে না। ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে সারাদেশে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার হাজার হাজার মানুষ রাজপথে পথে নেমে এসেছে। সরকারের বিরুদ্ধে গণরায় ঘোষণা করেছে। এটি উপেক্ষা করার পরিণাম হবে ভয়াবহ।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে বিচারকার্য শুরু করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়ে, শতশত মানুষের জীবন নিয়ে রাষ্ট্র আবার শোক পালন করছে। দেশের মানুষ এ ধরনের রাষ্ট্রীয় শোক দেখতে চায় না, দেশের মানুষ চায় প্রতিটি হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং সে অনুযায়ী বিচার। আমরা প্রতিটি হত্যাকাÐের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। ভবিষ্যতে যেন এমনভাবে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা করা না হয় সেজন্য সরকারকে সতর্ক করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করেছেন দেশের সাধারণ ও তরুণ আলেম সমাজ। এর অংশ হিসেবে ‘আমারও কিছু বলার আছে’ শিরোনামে এক সংহতি সমাবেশ করেছেন তারা। সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের জন্য নিরাপদ পরিবেশ চেয়েছেন সাধারণ আলেম সমাজ। গতকাল বেলা ১১টায় রাজধানীর কাজলায় আয়োজিত এক সংহতি সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন সাধারণ ও তরুণ আলেম সমাজ।