চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের অনুদানের উপর আমরা নির্ভরশীল নই। তবে সরকার যে বরাদ্দ দেবে তা সঠিকভাবে উন্নয়নকাজে খরচ করা হবে। আজ বুধবার (৩১ জুলাই) নগর ভবনের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মিলনায়তনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ৬ হাজার ৭৬০ কোটি ৭৪ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করে এসময় মেয়র বলেন, বাজেট একটি সংস্থার মধ্যকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম মানদন্ড। ফলে ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দায়িত্ব গ্রহণের পর বিগত অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা উন্নত ঢাকার উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ভিত বহুলাংশেই সুদৃঢ় করতে সমর্থ হয়েছি। সেই অগ্রযাত্রাকে নতুন আরেকটি ধাপে উন্নীত করতে বিশাল কর্মযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫১৩.৯৬ কোটি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭০৩.৩১ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৭৯.৬৫ কোটি এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১,০৩১.৯৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত অর্থবছরে পূর্বেকার সকল মাইলফলক অতিক্রম করে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দক্ষিণর ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১,০৬১.৫৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের নতুন ইতিহাস গড়তে সমর্থ হয়েছে। কয়েকটি কারণে এই অসাধ্য সাধন সম্ভবপর হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৯৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সেখানে অন্যান্য আয় ১০৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। সরকারি থোক ও বিশেষ বরাদ্দ ৭০ কোটি এবং মোট সরকারি ও বৈদেশিক উৎস থেকে আয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সেখানে অন্যান্য ব্যয় ১৫ কোটি ২ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এছাড়া ডিএসসিসির নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন ব্যয় ১ হাজার ৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা, সরকারি ও বৈদেশিক সহায়ক উন্নয়ন ব্যয় ৪ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা, মোট উন্নয়ন ব্যয় ৫ হাজার ৩৬৮ কোট ৩১ লাখ টাকা এবং সমাপনী স্থিতি ধরা হয়েছে ৮২৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর আগে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৬ হাজার ৭৫১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিল ডিএসসিসি। ওই অর্থবছরে বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৯৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এছাড়া অন্যান্য আয় ১০২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, সরকারি থোক ও বিশেষ বরাদ্দ ৬৫ কোটি টাকা, মোট সরকারি ও বৈদেশিক উৎস থেকে আয় ৪ হাজার ৪৫৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এছাড়া, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের মোট পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৪০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৫ কোটি ২ লাখ টাকা।
এছাড়া ডিএসসিসির নিজস্ব অর্থায়নে উৎস ব্যয় ৯৭৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। পাশাপাশি সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তায় উন্নয়ন ব্যয় ৪ হাজার ৪৫৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা এবং মোট উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৪৩২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আরো জানান, মেয়র নির্বাচনের প্রাক্কালে আমি ঢাকাবাসীর ওপর কোন রকমের করের বোঝা না চাপিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছিলাম। সেই প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী বিগত ৪ বছরে আমরা কোন খাতে কোন কর বৃদ্ধি করিনি। বরং এ সময়ে ২৫টি নতুন খাত সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ১৪টি নতুন খাত হতে আমরা রাজস্ব আদায় শুরু করেছি। ফলে, আয়ের খাত বৃদ্ধি, কর ফাঁকি রোধ এবং বকেয়া কর আদায়ের মাধ্যমে আমরা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি।
বিগত অর্থবছরে যে সকল খাত হতে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় করেছি তারমধ্যে গৃহ কর অন্যতম উল্লেখ করে মেয়র বলেন, গত অর্থবছরে এ খাত হতে ৪০০.৩৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে, যা, কর্পোরেশনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। গৃহ কর বাবদ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৪৭.২৩ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩২৪.৪০ কোটি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৫৪.৮৫ কোটি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮২ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে