একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি চুরি করে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেডিও ডিভাইসের মালামাল সরবরাহ করছে চায়নাভিত্তিক ইলেকট্রনিক কোম্পানি হাইটেরা কমিউনিকেশন কর্পোরেশন লিমিটেড। বাংলাদেশে লোকাল এজেন্টের মাধ্যমে ওয়াকি-টকি, রিপিটার, বেস রেডিওর পাশাপাশি ক্যাবল ও এন্টেনা বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতের নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে। আদালত প্রতিষ্ঠানটির পণ্য শুধু নয়, প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তা, এজেন্ট, কর্মচারী, সহযোগী, সহায়ক সংস্থাগুলিকেও নিষিদ্ধ করেছে। সেইসঙ্গে বিশ্বের কোনো দেশে বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না মর্মে দেয়া আদেশ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির যে কোনো ধরণের পরিবেশক, রিসেলার এবং তাদের সঙ্গে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরাও এই নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাইটেরা কমিউনিকেশন কর্পোরেশন লিমিটেড বেশ কয়েক বছর যাবতই বাংলাদেশে বিভিন্ন লোকাল এজেন্টের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। তাদের সরবরাহ করা রেডিও ডিভাইস পণ্যগুলো র্যাব ও পুলিশ ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে। কিন্তু পণ্যগুলো বিশ্বখ্যাত মটরোলা কোম্পানির প্রযুক্তি নকল করে তৈরি করা বলে অভিযোগ ওঠায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে মামলাও হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে। দীর্ঘ শুনানির পর আদালত অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় বিশ্বব্যাপী হাইটেরা‘র এসব পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করে।
মার্কিন ওই আদালত বলেছে, পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না দেয়া পর্যন্ত বিশ্বের যে কোন স্থানে হাইটেরাকে দ্বিমুখী রেডিও প্রযুক্তি সম্বলিত কোনো পণ্য বিক্রি বা বিতরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। দ্বিমুখী রেডিও পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে-পোর্টেবল, মোবাইল, বেস স্টেশন এবং রিপিটার যা দ্বিমুখী যোগাযোগ প্রোটোকল বাস্তবায়ন করে।
জানা গেছে, আদালতের এই নিষেধাজ্ঞার পর বিশ্বব্যাপী হাইটেরার রেডিও ডিভাইস পণ্যগুলো বিক্রি বন্ধ হয়ে গেলেও বাংলাদেশ পুলিশের দেয়া একাধিক টেন্ডারেও অংশগ্রহণ করে, গত বছর একটি টেন্ডারের কার্যাদেশ পায়। নিষেধাজ্ঞায় থাকা প্রতিষ্ঠানটির চলতি বছর অবশ্য লোকাল এজেন্ট বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার জন্য হাইটেরা কমিউনিমেশন আদালতের আদেশ অনুযায়ী নিজেদের ওয়েবসাইটে আদালদের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পাশাপাশি বিস্তৃতভাবে একটি বিবৃতিও জারি করেছে। এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে-হাইটেরা মার্কিন আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান করে এবং মার্কিন আদালতের মামলাবিরোধী নিষেধাজ্ঞার আদেশের সম্পূর্ণ সম্মতি অর্জনের জন্য কাজ করছে। বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি সমস্ত এজেন্ট, ডিস্ট্রিবিউটর, রিসেলার, গ্রাহক এবং সম্ভাব্য গ্রাহকদের আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অবহিত করেছে।
এদিকে মার্কিন আদালতের নিষেধাজ্ঞা দেয়া আদেশে হাইটেক কমিউনিকেশনস কর্পোরেশন লিমিটেডকে এই নিষেধাজ্ঞার আদেশ মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার জন্য হাইটেরা সব কিছু লিখিতভাবে তাদের এজেন্ট, সহযোগী, সহায়ক, পরিবেশক এবং যেকোনো ধরণের রিসেলার, গ্রাহক এবং সম্ভাব্য গ্রাহকদের অবহিত করতে হবে। এটি ওয়েবসাইটের হোম পেজে এবং এটি বাজারজাত করে এমন যেকোনো পৃষ্ঠায় স্পষ্টভাবে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। বিশ্বের যেকোনো স্থানে দ্বি-মুখি রেডিও পণ্যের গ্রাহকরা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে।
আদেশে হাইটেরা আদালতের আদেশ মেনে না চলা পর্যন্ত দৈনিক এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরিমানা প্রদানেরও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এ বিষয়ে হাইটেরা কমিউনিকেশন কর্পোরেশন লিমিটেডের বাংলাদেশ লোকাল এজেন্ট সুব্রতের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি হাইটেরার পণ্যগুলো মানসম্মত দাবি করে বলেন, অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি চুরি করে প্রতারণা করার বিষয়টি সঠিক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের আদালের দেয়া রায় নিয়ে হাইটেরা কাজ করছে। রায় ঘোষণার পর বাংলাদেশে এই মুহুর্তে রেডিও ভয়েস পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে না বলেও দাবি করেন করেন তিনি।
এ বিষয়ে র্যাবের প্রকিউরমেন্ট শাখার কর্মকর্তারা জানান, কোম্পানিটি র্যাবে কিছু জিনিসপত্র সরবরাহ করেছে। তবে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি র্যাব জানতো না, হাইটেরাও বিষটি কখনো জানায়নি।