পি আর পি কি? পি আর পি (PRP) বলতে বোঝায় Plaiclet Rich Plasma এটি রক্তের বিশেষ প্রক্রিয়াজাত অংশবিশেষ যেখানে রক্তরস অণুচক্রিকা (Platelet cell) এবং প্রয়োজনীয় গ্রোথ ফ্যাক্টর সমৃদ্ধ থাকে। এতে যে সব উপাদান থাকে তা নতুন কোষ তৈরির পাশাপাশি পুরনো কোষগুলোকে উজ্জীবিত করে এবং এরই ভিত্তিতে এটি মানবদেহের বিভিন্ন অংশের যেমন ত্বক, চুল, অস্থিসন্ধি (Joint), মাংসপেশীর আঘাত, টেন্ডনের আঘাত, পুরনো ক্ষত (Non healing ulcer)- চিকিৎসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, উপকৃত হচ্ছে গোটা মানবসমাজ।
পি আর পি কিভাবে তৈরি করা হয় ?
সাধারণত প্রতিমাসে ১ বার রোগীর কনুইয়ের ভাজের (Elbow joint) রক্তনালী থেকে ২০ মিলি রক্ত নিয়ে একটি বিশেষায়িত মেশিনে দিয়ে ১০ থেকে ১২ মিনিট উচ্চমাত্রায় ঘুরানো হয়। এতে করে টেস্টটিউবের ভেতর ৩টি সুনির্দিষ্ট স্তর তৈরি হয়, যথাক্রমে প্লাটিলেট পুওর প্লাজমা, প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা ও রেড ব্লাড সেল এর মধ্যে উপরের, অনেকটা হলুদ রঙের অংশটি খুবই সতর্কতার সঙ্গে ইনসুলিন সিরিঞ্জে তোলা হয়, এটিই পি আর পি থেরাপি ।
পি আর পি কিভাবে দেয়া হয় ?
রোগীকে পি আর পি দেয়ার আগে নির্দিষ্ট স্থানে বিশেষ জীবাণু নাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। (Topical anaesthetic) ইঞ্জেকশন (Local anesthetic) দিয়ে সাময়িকভাবে অবশ করা হয় যা ৩০-৪০ মিনিট কার্যকরী থাকে। এ সময়ের মধ্যেই পিআরপি থেরাপি ইনসুলিন সিরিঞ্জের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। থেরাপি নেয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে রোগী বাসায় যেতে পারেন এবং স্বাভাবিক সব ধরনের কাজকর্ম করতে পারেন। পুরুষ ও নারী সবার চুল ও ত্বকের আধুনিক চিকিৎসায় এটি ভাল ফলাফল এনে দেয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে এ প্রক্রিয়া অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে করা উচিত। সাধারণত প্রতিমাসে ১ বার করে, ৮ থেকে ১২ মাস এটি করা হয় এবং থেরাপি শুরুর ৩ মাস পর থেকেই রোগী অবস্থার পরিবর্তন ও উন্নতি বুঝতে পারেন। রোগের অবস্থান, রোগীর বয়স, শারীরিক অবস্থা সবকিছুর ওপর ভিত্তি করে ফলাফল নির্ভর করে। ভাল ফলাফলের জন্য অনেক সময় থেরাপির পাশাপাশি ঔষুধ খাওয়া এবং ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়।
পি আর পি থেরাপি কিভাবে কাজ করে ?
ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে পি আর পি প্রয়োজনীয় স্থানে দেয়ার পর পি আর পি এর ভেতরের গ্রেনুউল ভেঙ্গে প্রচুর গ্রোথ ফ্যাক্টর রিলিজ করে যা স্বাভাবিক গ্রোথ ফ্যাক্টরের পরিমাণ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় এবং পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে টিস্যুর নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে সন্দেহ নাই, বর্তমান দুনিয়ায় পি আর পি থেরাপি চিকিৎসা বিজ্ঞানকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে এবং এটা একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার। তবে মনে রাখতে হবে পি আর পি থেরাপিতে মানুষ যেমন উপকৃত হচ্ছে তেমনি অদক্ষ কারও হাতে পরে মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখিও হতে পারেন। অতএব, সাধু সাবধান।
পি আর পি চিকিৎসার সুবিধা নিন, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে।
পিআরপি থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ইনফেকশনের স্থানে ব্যথা করা, মাথার ত্বকে ইনফেকশন, নার্ভ ড্যামেজ, চুলকানি ইত্যদি। ব্রেণের কোন সমস্যা বা ভবিষ্যতে ক্যান্সারের মতো বড় কোন অসুখ হওয়ার সুযোগ নেই। পি আর পি থেরাপি নেয়ার পর ঠান্ডা বা অতিরিক্ত গরম স্যাঁক নেয়া যাবে না, এ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকতে হবে ৷
পি আর পি থেরাপি কাদের নেয়া উচিত নয় ?
যাদের প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকার সংখ্যা কম, যাদের রক্তে ফিরিনোজেন কম, শরীরে দীর্ঘ মেয়াদি কোন ইনফেকশনের উপস্থিতি, কোন ধরনের রক্তরোগ, ক্যান্সারের রোগী দীর্ঘ মেয়াদি লিভারের রোগ, যারা এন্টি কোয়াগুলেশন থেরাপিতে আছেন (Warferin, Heparin) নিয়মিত নিয়ে থাকেন)।
পিআরপি থেরাপি কোন কোন ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল দেয়
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে পি আর পি থেরাপি ভাল কাজ করে যেমন ব্রণের ক্ষত (Acne scar), লোমকূপ বড় হয়ে যাওয়া (Enlarged pores) চোখের নিচের কালো দাগ (Under eye dark cincle), অল্প বয়সে তুক বুড়িয়ে যাওয়া (Early aging), ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো (Skin glowing) ইত্যাদি। চুলের চিকিৎসায় পি আর পি থেরাপি নিয়ে এসেছে অভাবনীয় সাফল্য। সাধারন চুল পড়া (Diffine hair loss), জায়াগায় জায়গায় চুল পড়া (Alopecia arcata), সর্বোপরি বংশগত চুলপড়া (Androgenic alopecia) পি আর পি থেরাপি এনেছে যুগান্তকারী সাফল্য ।
ত্বক ও চুলের সর্বাধুনিক চিকিৎসা
ডা:জাহেদ পারভেজ
চুল বিশেষজ্ঞ ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন,সহকারী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।
চেম্বারঃ ডাঃ জাহেদ'স হেয়ার এন্ড স্কিনিক ১৫২/১/এইচ, (৬ তলা ) গ্রীন রোড, পান্থপথ মোড়, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৫০৫০৯৪৯, ০১৭৩০৭১৬০৬০।