পরিবার পরিকল্পনা সেবার মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিশ্চিত, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমিয়ে আনতে কাজ করে সরকার। তবে গত আট মাস ধরে ঔষধ মজুদ সংকটের মধ্যদিয়ে চলেছ বিশ্ব স্বাস্থ্যসহ ১১টি দাতা সংস্থার বিনিয়োগকৃত সরকারের জনগুরুত্বপূর্ণ এই কর্মসূচী। মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রায় প্রতিটি জায়গায় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর মজুদ শূন্যতা বিরাজ করছে। ফলে সরকারের এই সেবা খাতের অগ্রগতি হুমকির মুখে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী কনডম, খাবার বড়ি, ইঞ্জেকশনসহ মা ও শিশু স্বাস্থ্য ঔষধ সামগ্রীর মজুদ শূন্যের কোটায় রয়েছে। ফলে দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠীর জরুরী এ সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও স্থানীয় পর্যায়ে খোজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। গত আট মাস যাবৎ জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবার ঔষধ সামগ্রীর মজুদ শূন্যতার বিষয় দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবার ঔষধ সামগ্রী যথাযথভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে সরবরাহ করতে না পারায় অধিদপ্তরের মাঠ কর্মীদের মধ্যেও হতাশা বিরাজ করছে।
সম্প্রতি নাম প্রকাশ না করা শর্তে মানিকগঞ্জ জেলার এক কর্মকর্তা জানান, গত ৪ মাস ধরে কর্মীদের কাছে কোনো ইনজেকশন ও কনডম নেই। এছাড়া খাবার বড়িও প্রায় মজুদ শূন্য। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী যথাযথভাবে বিতরণ করা না গেলে, এর প্রভাব হয়তো তাৎক্ষণিক বুঝা যায় না। কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব যেমন-অনাকাংক্ষিত গর্ভধারণ, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু এবং জনসংখ্যাও কাংক্ষিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। অর্থাৎ টিএফআর বৃদ্ধি পাবে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সমূহের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় খাবার বড়ি (তৃতীয় প্রজন্ম)। সারাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহীতার মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ সক্ষম দম্পতি এ পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। অধিদপ্তরের সাপ্লাই চেইন এর তথ্যমতে প্রতিমাসে খাবার বড়ির চাহিদা ৬ মিলিয়ন সাইকেলের বেশি। খাবার বড়ি (তৃতীয় প্রজন্ম) এর বর্তমান মজুদ মাত্র ৬.৭ মিলিয়ন সাইকেল। বর্তমান যে মজুদ আছে, তা দিয়ে ১.৩ মাস চলবে। এরইমধ্যে ২৮৭টি উপজেলায় মজুদ শূন্য হয়েছে। এছাড়া ১২৭ উপজেলায় যেকোন সময় খাবার বড়ি (তৃতীয় প্রজন্ম) মজুদ শূন্য হবে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, যে কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মজুদ ৬ মাসের নীচে নামলেই বিক্ষিপ্তভাবে মজুদ শূন্যতা দেখা দেয়। যেমন কনডম ২৩ টি উপজেলা স্টোরে মজুদ শেষ, ৮৭ টি উপজেলা স্টোরে মজুদ শেষ পর্যায়ে।
দেশের প্রায়ই সব পরিবার পরিকল্পনা স্টোরে (৪৯৫ উপজেলা) জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ইনজেকশন নেই। প্রতিমাসে প্রায় ৯ লাখ ভায়াল এর উপরে ইনজেকশনের চাহিদা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ক্রয়ের বিষয়ে দায়িত্ব প্রাপ্তদের উদাসীনতা রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বর্তমান সরকারের অত্যন্ত সফল একটি কর্মসূচীকে বাধাগ্রস্থ করে দেশে ও বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা, তা চিহ্নিত করে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি রাখে।
মজুদ সংকটের কথা স্বীকার করে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ণ) আবদুস সালাম খান বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় স্টক আউট ও বেশ কিছু জায়গায় স্টক শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু পণ্য আমাদের হাতে এসেছে। সরবরাহ শুরু হলে সংকট কমতে শুরু করবে। তিনি বলেন, কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে পূণ: দরপত্র আহবান করা হবে। এছাড়া রেভিনিউ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। সবমিলিয়ে আশাকরি দ্রুতই এ সংকটের সমাধান হবে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক ( উপকরণ ও সরবরাহ ) মতিউর রহমান বলেন, অধিদপ্তরের মজুদ সংকটের সমাধান খুব শিগগিরই সমাধান হবে। এরইমধ্যে মাঠপর্যায়ে মালামাল পৌছে গেছে। আশাকরি জুন মাসের মধ্যেই সংকট কেটে যাবে।
দেশব্যাপী জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সংকটের বিষয়টি নজরে আনলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রীর সংকটের বিষয়টি আমার নজরে রয়েছে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কোথাও যাতে সংকট না হয়, সেজন্য দ্রুত সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।