বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার নির্বাচন আগামী ৯ জুন। নির্বাচনের তিন দিন আগে ‘গ’ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থীকে বদলি করা হয়েছে। যা শিক্ষা ক্যাডারের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। এ নিয়ে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্থিরতা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। গত বুধবার রাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ‘গ’ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরীকে বদলি করে অফিস আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ১৪তম ব্যাচের চৌকস হিসেবে পরিচিত এই কর্মকর্তা মাধমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আগামী রোববার অনুষ্ঠিতব্য শিক্ষা ক্যাডার নির্বাচনকে বাধাঁগ্রস্ত করতেই এই আদেশ জারি করা হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষা ক্যাডারের ঊর্ধ্বতনরা।
তাদের অভিযোগ, এই বদলির পেছনে শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার সরাসরি হাত রয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষা ক্যাডার সমিতির নির্বাচনে যাতে কোনো কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করতে না পারেন সেজন্য রোববার (৯ জুন) মাউশির সব কর্মকর্তাদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ে কর্মশালার আয়োজন করেছেন শিক্ষা সচিব। এতে ৮৮ জন কর্মকর্তার নামও রয়েছে। যদিও অনিবার্য কারণ দেখিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই কর্মশালা স্থগিত করা হয়েছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে শিক্ষা ক্যাডারের কয়েকজন সিনিয়র অধ্যাপক জানিয়েছেন, নির্বাচনের তিন দিন আগে ‘গ’ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থীকে বদলি করা শিক্ষা প্রশাসনের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে একজন কর্মকর্তাকে বদলি করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা আরও বলেন, এ ঘটনায় শিক্ষা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন ব্যক্তি জড়িত। মূলত অন্য একটি বিশেষ প্যানেলকে ‘বাড়তি’ সুবিধা দেওয়ার জন্যই তড়িঘড়ি করে এমন অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। যা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। বদলির এই আদেশ পুনর্বিবেচনার দাবিও জানান তারা।
অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরীর বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সরকারি কলেজ-২) চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমীন। অফিস আদেশ থেকে জানা যায়, শাহেদুল খবির চৌধুরীকে ঢাকার সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এত দিন তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীমকে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) এর সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি দেশের ক্যাডারের শীর্ষ পেশাজীবী সংগঠন। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৭ সালে। সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালের ২১ মার্চ। দুই বছর অন্তর অন্তর নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। আগামী ৯ জুন রোববার অনুষ্ঠিত হবে এই নির্বাচন। এই নির্বাচনে ৯৫ পদে মোট ২৩২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিন প্যানেলের বাইরে অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিন প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী, অধ্যাপক মো. মামুন উল হক ও ড. আ জ ম রুহুল কাদীর। এ নির্বাচনে মোট ভোটার প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার।
মাউশি সূত্র জানায়, নির্বাচন ছাড়াও মাউশির মহাপরিচালক পদের প্রার্থী হিসেবে শাহেদুল খবির চৌধুরীর নাম আলোচিত হওয়া, বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা ক্যাডারের দাবি-দাওয়া আদায়ে তাঁর আপসহীন ভূমিকা শিক্ষা প্রশাসনের উর্ধ্বতনরা ভালোভাবে নেননি। যার প্রভাবও রয়েছে বদলির ক্ষেত্রে। শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা বলেন, মূলত শিক্ষা প্রশাসনের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি ও সাবেক কয়েকজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার ‘বিশেষ আগ্রহে’ নির্বাচনের তিন দিন আগে এমন বদলির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বৃহৎ পেশাজীবী ক্যাডার শিক্ষাকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ এপ্রিল মাউশির মহাপরিচালক হিসেবে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। এর আগেও তিনি প্রায় দুই বছর মাউশির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।