সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে এবার সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয় তারা। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপত আখতারুল ইসলাম, সংগঠনটির মহা সচিব ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূইয়া, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, অধ্যাপত ড. সাইফুল আলম ভূইয়া, অধ্যাপক ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, সর্বাত্মক কর্মবিরতির আগে হুশিয়ারি সরূপ আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন ফের অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিন করবে তারা। পরে ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবে। এর মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না করা হলেই ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ব্যানারে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, পহেলা জুলাই থেকে এদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস হবে না। চেয়রম্যানরা সকল বিভাগ বন্ধ করে দিবেন। কোন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। হলের হাউজ টিউটররা আর কোন হলে যাবে না। কোন ইনিস্টিউটের পরিচালক আর ইনস্টিটিউটে যাবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, গবেষণা, ওয়ার্কসফ শিক্ষকরা করবেন না। নতুন কোন কর্মসূচি শিক্ষকরা গ্রহণ করবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়েল সেন্ট্রাল লাইব্রেরিও ও বন্ধ থাকবে। কারণ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পরিচালকও একজন শিক্ষক।পহেলা জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল গবেষণাগার বন্ধ হয়ে যাবে ।বন্ধ করা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম । এটাই সর্বাত্মক আন্দোলনের রূপ রেখা।
লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহা সচিব নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, শিক্ষকরা অদ্যাবধি নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পরীক্ষা কোনোভাবেই যেন বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অনেকটা প্রতীকী কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে এ বিষয়ে সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণের সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছে। বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচির মত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হলেও এখনও পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। শিক্ষকদের সাথে দায়িত্বশীল কোনো পক্ষ যোগাযোগও করেননি। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-সমাজের মধ্যে চরম হতাশা এবং ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রস্তাবিত 'প্রত্যয়' স্কিম বাস্তবায়ন হলে বর্তমান শিক্ষার্থী, যাঁরা আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মত মহান পেশায় আসতে আগ্রহী, তাঁরাই এর ভুক্তভোগী হবেন। কাজেই বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের চলমান আন্দোলন আগামী দিনের তরুণ সমাজের স্বার্থরক্ষা তথা উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে। আমরা এখনও আশা করি শিক্ষক সমাজকে যারা সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের চলমান প্রতীকী কর্মসূচি সর্বাত্মক আন্দোলনে পরিণত হবে।
আগামী ২৪শে জুন ২০২৪ তারিখের মধ্যে ১৩ই মার্চ ২০২৪ তারিখ জারিকৃত 'প্রত্যয় স্কিম' সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে বাংলাদেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্নোক্ত কর্মসূচি পালিত হবে।
১. আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন ২০২৪ অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিত হবে। পরীক্ষাসমূহ কর্মবিরতির আওতামুক্ত;
২. ৩০ জুন ২০২৪ পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হবে। পরীক্ষাসমূহ কর্মবিরতির আওতামুক্ত;
৩. ১লা জুলাই ২০২৪ তারিখ থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো আব্দুর রহিম বলেন, সব সময় প্রশাসনের একটি মহল চেষ্টা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে সরকারের মুখোমুখি করতে। এ প্রত্যয় স্কিমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে অন্যায় করা হয়েছে।