প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ৭:০৭ পিএম (ভিজিটর : ৬৯১)
আমাদের চার পাশে এখন নানা অসঙ্গতি দেখছি। মনে হচ্ছে মানুষের মধ্যে কেন যেনো অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলছে। যেমনটি আগে ছিল বলে মনে হয় না। দিন যতো যাচ্ছে অবস্থা ততই খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে শিশুরা কেন যেন উদ্ভট আচরণ করছে। অনেক বাচ্চারা এমন যে তারা খেতে চায় না, সময় মতো ঘুমাতে চায় না, পড়তে চায় না। এটা এখন একটা বাস্তবতা। সমাজ বিজ্ঞানিরা এসব বিষয় নিয়ে অনেকটাই আশাহত। আমরা ছোট বেলায় শুনেছি, “কাঁদামাটি দিয়ে চাইলে যে কোনো ধরণের পাত্র বানানো যাবে, কিন্তু ওই মাটি পুড়ানোর পর তা সম্ভব নয়,” অর্থ্যাৎ ভবিষ্যতে আমার প্রজন্ম থেকে ভালো কিছু পেতে হলে শিশুকাল থেকেই তাকে গড়ে তুলতে হবে। দিতে হবে সুশিক্ষা।
পরিবার একটি পবিত্র সংস্থা। মানবশিশুর সর্বপ্রথম ও সর্বোত্তম শিক্ষালয়। মা-বাবাই সন্তানের প্রথম আদর্শ শিক্ষক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এ যুগেও যেমন নবজাতকের জন্য মায়ের দুধের বিকল্প খাবার কিংবা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি; তেমনি সুনাগরিক তৈরিতে পরিবারের বিকল্প কোনো প্রতিষ্ঠান আজও গড়ে ওঠেনি। তাই ইসলাম পারিবারিক পরিবেশে দ্বীনচর্চার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু আধুনিকতার নামে সেই পারিবারিক শিক্ষায় যেমন উপেক্ষিত বাংলা ভাষা; তেমনি উপেক্ষিত ইসলামও। মা-বাবা, ভাই-বোন সবাই একসঙ্গে দেখছে হিন্দি ফিল্ম। শিশু শিক্ষা নিচ্ছে ছুরি দিয়ে অন্যকে হত্যা করার বিদ্যা। ফজরের নামাজে বাবার হাত ধরে জামাতে শামিল হওয়ার দৃশ্য হারিয়ে গেছে কথিত আধুনিকতার অতলগহ্বরে। বাড়ছে জিপিএ-৫সহ পাসের হার, কমছে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা। ফলে পার্থিব জীবনেও আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে দুঃসহ যন্ত্রণা।
আজকের শিশু আগামী জাতির কর্ণধার। তাকে আদর্শবান হয়ে গড়ে তোলার মহান দায়িত্ব পালনে পরিবারের সদস্যদের আজই সতর্ক হতে হবে। দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে মা-বাবাকে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা শেখাতে হবে পরিবারেই। বড়কে শ্রদ্ধা, ছোটকে স্নেহ করার মানসিকতা তৈরি করে দিতে হবে পরিবারেই। যে মানুষ যত বড়, সে তত বিনয়ী। শিক্ষা দিতে হবে বিনয়-নম্রতার মহান গুণ। প্রতিবেশী গরিব-দুঃখীদের সঙ্গে মিশতে দিতে হবে। সন্তান যতই ছোট হোক, এমনকি দুধের শিশু হলেও তার সামনে কোনো ধরনের যৌনালাপ ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এতে তার মস্তিষ্কে নির্লজ্জের যে ছাপ পড়বে, তাতে শয়তানের কুমন্ত্রণায় তা প্রকট হয়ে উঠবে। সামান্য অন্যায়ে বকাঝকা করা অনুচিত। প্রয়োজনে একান্তে বসে শাসন করা যায়।
প্রাইভেট শিক্ষক রেখে কিংবা মক্তবে পাঠিয়ে যেভাবেই হোক সন্তানকে পরিবার থেকেই কোরআনি শিক্ষা দিতে হবে। ‘আধুনিকতার নামে সন্তানকে ইসলামী শিক্ষা না দিলে পরবর্তী সময় তা তাকে বিপথে ঠেলে দিতে পারে। রিচার্ড এডওয়ার্ড (বিখ্যাত নাট্যকার) তার ‘দি এক্সিলেন্ট কমেডি’ গ্রন্থে লিখেছিলেন, স্ট্রাইক হোয়াইল দি আয়রন ইজ হট। অর্থাৎ লোহা গরম থাকতে থাকতে পেটাও! দেরি করো না। যখন ঠান্ডা হয়ে যাবে। ঠান্ডা লোহা কথা শুনবে না। তখন আফসোস হবে, দা-কুড়াল হবে না।
সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলার ইচ্ছে থাকে প্রত্যেক অভিভাবকের। দশ জনের মধ্যে এক জন হতে না পারলেও, সন্তান যেন ভাল মানুষ হয়, এমন আশা প্রতিটি মা-বাবারই থাকে। তবে এই ডিজিটাল যুগের শিশুদের মানুষ করতে, মূল্যবোধ বোঝাতে গেলে কিন্তু পুরোনো ধ্যান-ধারণা মেনে চললে হবে না। দশে পা দেওয়ার আগেই কিছু অত্যাবশীয় বিষয় শিশুকে শিক্ষা দিয়ে রাখতে হবে। তাদের মন বুঝে, তাদের মতো করে অভিভাবকদের শেখাতে হবে ভাল মানুষ হওয়ার মন্ত্র।
শিশুকে এ নম্বরে শেখাতে হবে, অন্যকে সম্মান করা, দায়িত্ব নিতে শেখাতে হবে, কোনো সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধান করা শেখা লাগবে, টাকা পয়সাসহ অন্য যেকোনো গণিত, শরীরচর্চা ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ শেখার বিকল্প নেই।
লেখক: হাসান আল বান্না, সাংবাদিক ও কলামিস্ট