ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে রক্ষণাত্মক ক্রিকেট খেলে প্রথম তিন ম্যাচেই জয় তুলে নিয়েছে টাইগারা। এতে চট্টগ্রাম পর্বেই সিরিজ নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের। গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে তৃতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৯ রানে হারিয়েছে শান্ত বাহিনী। পরের দুই ম্যাচ ১০ ও ১২ মে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। আগের দুই টি-টোয়েন্টিতে হেসেখেলেই জিতেছে বাংলাদেশ। তবে এবার আর সহজ জয় নয়। গতকাল শেষ পর্যন্ত লড়লো জিম্বাবুয়ে। যদিও শেষ রক্ষা করতে পারেনি তারা। উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে সফরকারীদের ৯ রানে হারিয়ে দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই পাঁচ ম্যাচের সিরিজ জিতে নিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
তবে বরাবরের মতো ব্যাটিং প্রত্যাশা মতো না হলেও বোলিং মোটামুটি করে বাংলাদেশ। মিডল অর্ডারে মান রক্ষা হয়েছে ব্যাটিং ইনিংসের। জিম্বাবুয়েকে দিতে পারে ১৬৬ রানের ইনিংস। এই লক্ষ্য তাড়া করতে নামা জিম্বাবুয়েকে দারুণ বোলিং দিয়ে চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ। রান তাড়া করতে নামা জিম্বাবুয়ের স্কোরবোর্ডে ৩৩ রান তুলতেই তিন উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও তানজিম সাকিবের গতিতে বিপাকে ছিল সফরকারীরা। ম্যাচের শুরুতেই লিটন-শান্তর ব্যর্থতায় বাংলাদেশ ছিল নড়বড়ে। তবে, মাঝে তাওহীদ হৃদয় ও জাকের আলি মিলে মান বাঁচান। হৃদয় ৩৮ বলে ৫৭ রান করে আউট হন তিনি। ৩টি বাউন্ডারি এবং ২টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। ৩৪ বলে ৪৪ রান করেন জাকের আলি অনিক। ৩টি বাউন্ডারির সঙ্গে ২টি ছক্কার মারও মারেন তিনি। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দ্রæত আউট হন লিটন দাস এবং অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজনই রয়েছেন দারুণ অফ-ফর্মে। বিশ্বকাপের আগে এই দুই টপ অর্ডার ব্যাটারের অফ ফর্ম খুব দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টসহ ক্রিকেটপ্রেমী সবাইকে। গতকালও নিজেকে হারিয়ে যেন খুঁজছেন লিটন এবং শান্ত। তানজিদ হাসান তামিমের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে নেমে ৩.৪ ওভারে (২২ বলে) ২২ রানের জুটি গড়েন লিটন। এরপরই বেøসিং মুজারাবানির বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান বাংলাদেশের এই ওপেনার। ১৫ বল মোকাবেলা করে মাত্র ১২ রান করেছেন তিনি। নাজমুল হোসেন শান্ত এসে জুটি বাধেন তানজিদ হাসান তামিমের সঙ্গে। এই জুটিও খুব বেশিদূর এগুতে পারেনি। মাত্র ৬ রানের জুটি। দলীয় ২৯ রানের মাথায় জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিকান্দার রাজার বলে বোল্ড হয়ে যান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ৪ বলে ৬ রান করেন তিনি। তানজিদ তামিম আউট হন ২২ বলে ২১ রান করে। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ ৯ রানে এবং রিশাদ হোসেন ৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৪ রান করে ম্যাচ সেরা হন তাওহিদ। গতকাল একাদশে আসেন তানজিম সাকিব ও তানভীর ইসলাম। তাদের জায়গা দিতে একাদশে নেই শরিফুল ইসলাম ও শেখ মেহেদি। অর্থাৎ একজন অলরাউন্ডার বাদ দিয়ে একজন বাড়তি বোলার নিয়ে লড়াইয়ে নামে বাংলাদেশ।
১৬৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকে জিম্বাবুয়ে। দলীয় ১৬ রানের মাথায় মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন তুলে নেন ওপেনার জয়লর্ড গাম্বিকে (৮ বলে ৯)। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বল হাতে নিয়েই উইকেটের দেখা পান তানজিম হাসান সাকিব। নিজেই ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ব্রায়ান বেনেটকে (৮ বলে ৫)। পরের ওভারে ক্রেইগ আরভিনকে (৭ বলে ৭) বোল্ড করেন সাইফউদ্দিন। রিশাদ হোসেনের ঘূর্ণিতে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিকান্দার রাজা (৫ বলে ১) গøাভসবন্দী হন উইকেটরক্ষক জাকের আলীর।
একটা প্রান্ত ধরে ছিলেন ওপেনার তাদিওয়ানাশে মারুমানি। ১১তম ওভারে মাহমুদউল্লাহকে বোলিংয়ে এনে চমক দেখান শান্ত। মাহমুদউল্লাহ তুলে নেন ২৬ বলে ৩১ করা মারুমানিকে। ১৬ বলে ১১ করে তাসকিনকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ হন ক্লাইভ মাদান্দে। ৭৩ রানে ৬ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।
জোনাথান ক্যাম্পবেল ফের লড়াই করার চেষ্টা করেন শেষদিকে নেমে। ১৪তম ওভারে বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামকে টানা দুই ছক্কা হাঁকান জিম্বাবুয়ের কিংবদন্তি ক্রিকেটার অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে। তবে আরেকটি ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনেন ক্যাম্পবেল। ডিপ মিউইকেট বাউন্ডারিতে লিটনের হাতে ধরা পড়েন ১০ বলে ২১ করা বাঁহাতি এই ব্যাটার।
৯১ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে ছিল জিম্বাবুয়ে। সেখান থেকে ফারাজ আকরাম আর ওয়েলিংটন মাসাকাদজার নবম উইকেটে জিম্বাবুয়ের রেকর্ড জুটি হয়। ৩০ বলে ৫৪ রানের জুটিতে মূলত ফারাজ আকরামই ম্যাচটা জমিয়ে তুলেন। মাসাকাদজা ১৪ বলে ১৩ করে আউট হন।
কিন্তু শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই করেছেন আকরাম। ১৯ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৪ রানে অপরাজিত থেকে যান এই ব্যাটার। প্রথমদিকে মিতব্যয়ি বোলিং করলেও পরে রান দনে সাইফউদ্দিন। ৩ উইকেট পেলেও ৪ ওভারে ৪২ রান খরচ করেন সাইফউদ্দিন। রিশাদ হোসেন ২ উইকেট নিতে ৩ ওভারে দেন ৩৮। তানভীর ৪ ওভারে ২৬, তাসকিন ২১, তানজিম সাকিব ২৬ রানে নেন একটি করে উইকেট। মাহমুদউল্লাহ ১ ওভার হাত ঘুরিয়ে ১ রানে নেন একটি উইকেট। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের খেলা ছয়টি টি-টোয়েন্টি সিরিজের মধ্যে চারটিই জিতলেন নাজমুলরা। প্রথম দুই ম্যাচে ১ ও ২৩ রানে আউট হওয়া লিটন থামলেন ১২ রানে এবং অবশ্যই সেটা ভুলে যাওয়ার মতো ১২ রান। ফারাজ আকরামের অনেক বাইরের বলে লেট কাটে মারা একটি বাউন্ডারি ছাড়া বাকি রানগুলো যেভাবে এসেছে, তাতে লিটন নিজেও গর্ববোধ করবেন না। বেশ কিছু বল তিনি অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে টেনে খেলেছেন লেগের দিকে। পুল করতে গিয়ে শরীরের ভারসাম্য হারিয়েছেন। এরপর বেøসিং মুজারাবানির করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে লিটন অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্কুপ করতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে আনেন। এর আগের দুই বলেও স্কুপ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত ১৫ বলে ১২ রানে থামে লিটনের দুঃস্বপ্নের ইনিংস। জিম্বাবুয়ে ভালো খেললেও শেষ পর্যন্ত জয় তুলে নেওয়ায় খুশি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল শান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, খেলোয়াড়রা যেভাবে খেলেছে তাতে আমি উৎফুল্ল। তারা দারুণ চরিত্র দেখিয়েছে, বিশেষ করে হৃদয় ও জাকের।
শেষ ৫ ওভারে বোলিং ভালো হয়নি বলেও জানান শান্ত। তবে পরবর্তী ম্যাচে ভালো করার কথাও বলেন, আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হতো। শেষ ৫ ওভারে ভালো বোলিং করিনি আমরা। এই জায়গাটা ভালোভাবে সামলাতে হবে আমাদের। আশা করছি, পরের ম্যাচে আরও ভালো করবো। ম্যাচ সেরা তাওহীদ হৃদয় বলেছেন, আমি পরিকল্পনা অনুযায়ী এবং পরিস্থিতি মেনে খেলার চেষ্টা করেছি। উইকেট ধীর ছিল। আমি সময় নিয়ে খেলার চেষ্টা করেছি, সঙ্গে যে ছিল তাকেও একই পরামর্শ দিয়েছি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ১৬৫/৫ (হৃদয় ৫৭, জাকের ৪৪, তানজিদ ২১, লিটন ১২, মাহমুদউল্লাহ ৯*, রিশাদ ৬*; মুজারাবানি ৩/১৪, রাজা ১/৩৮, ফারাজ ১/৪৪)।
জিম্বাবুয়ে : ১৫৬/৯ (ফারাজ ৩৪*, মারুমানি ৩১, ক্যাম্পবেল ২১, মাসাকাদজা ১৩, মাদান্দে ১১; সাইফউদ্দিন ৩/৪২, রিশাদ ২/৩৮, তাসকিন ১/২১, তানজিম ১/২৬, মাহমুদউল্লাহ ১/১)।
ফলাফল : বাংলাদেশ ৯ রানে জয়ী।
সিরিজ : পাঁচ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০ তে এগিয়ে।
ম্যাচসেরা : তাওহিদ হৃদয় (বাংলাদেশ)।